হাওরের রাস্তায় আলপনা; গিনেজ বুক রেকর্ড নাকি বাঙ্গালিয়ানা দেখাতে গিয়ে পরিবেশ ধ্বংস!

হাওরের রাস্তায় আলপনা; গিনেজ বুক রেকর্ড নাকি বাঙ্গালিয়ানা দেখাতে গিয়ে পরিবেশ ধ্বংস!

Spread the love

 

সম্প্রতি পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গিনেজ বুকে নাম লেখানোর উদ্দেশ্যে কিশোরগঞ্জের মিঠামাইনঅষ্টগ্রাম হাওর সড়কের ১৪ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে আলপনা করা হয়েছে। এই আলপনার উদ্যোগের সাথে জড়িত আছে এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেড এবং বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। আয়োজকেরা বলেন, বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য এই প্রয়াস। এই উদ্যোগটি বেসরকারি হলেও এর উদ্ভোধন হতে শুরু করে নানা কাজে বিভিন্ন সেক্টরের সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি জানান দেয় যে এই বিষয়টি সরাসরি সরকারি মহল থেকে অনুমতি নিয়েই করা হয়েছে।

হাওরের মত একটি জীব বৈচিত্র্যপূর্ণ স্থানে এরকম মহাযজ্ঞ চালানোর প্রভাব কতদূর তা আমাদের সংশ্লিষ্ট মহল সমূহের ভাবা উচিত ছিল বলে মনে করি। যেখানে দেশের মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ দিনকে দিন বেড়েই চলছে সেখানে এরকম একটি কাজ যে পরিবেশের জন্য আরো ক্ষতি বয়ে আনবে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা থাকে না। ২০২১ সালের এক গবেষণাতে বের হয়ে আসে যে ১৫ প্রজাতির মাছে মাইক্রো প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। যেসব মাছের নাম এই গবেষণাতে উঠে এসেছিল রুই, তেলাপিয়া, কই, কালিবাউশ, বেলে, টেংরা, কমন কার্প, পাবদা, পুঁটি, শিং, টাটকিনি, বাইন, বাটা, মেনি ও বাছা । এরমধ্যে টেংরা, টাটকিনি ও মেনি মাছে বেশি পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে। এখানে যে মাছ সমূহের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এদের বেশিরভাগই দেশীয় মাছ। এবং সকলেই সাদু পানির মাছ। অর্থাৎ এ মাছ সমূহের বড় এক উৎস হল এই হাওর সমূহ।

মাইক্রোপ্লাস্টিকের নমুনা। সময়ের ব্যবধানে বড় প্লাস্টিক ভেঙ্গে এরকম অগনিত মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। ছবিটা Getty Image এর।

মাছের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক যাওয়ার উপায় হল, বিভিন্ন প্লাস্টিক বর্জ্য যার শেষ গন্তব্য হয় এই হাওর বা নদী নালাতে সেখানে অনেক দিন থাকার পর তা ধীরে ধীরে ফটোকেমিক্যালি ও বায়োলজিক্যালি ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয় । এই ক্ষুদ্র কণা মাছের খাবারের সাথে খুব সহজেই মিশে যেতে পারে। এবং মাছ এক পর্যায়ে খাবার ভেবে এগুলো খেয়ে নেয়। এভাবেই পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে মাছ তা তার খাদ্যের সাথে গ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ যা এক সময় মাছের মাধ্যমে আমাদের শরীরেও এক সময় চলে আসতে পারে। 

মাছ যেহেতু হাওরের জীব বৈচিত্র্যের অন্যতম প্রধান নিয়ামক। হাওরের অসংখ্য পাখি এবং নানা রকমের সরীসৃপ মূলত টিকে থাকে এই মাছকে কেন্দ্র করে তাদের বড় একটা অংশই দেখা যাবে তারা মাছের কারণে প্লাস্টিকের হোস্ট হয়ে দাড়াচ্ছে। অর্থাৎ মাছের মাইক্রোপ্লাস্টিক ভক্ষণ তা কোন না কোনভাবে হাওর এলাকার সব প্রাণীর উপরই ভূমিকা রাখবে।

প্রশ্ন হল, হাওরের রাস্তার আলপনার রঙ মাছ কিভাবে খাবে?

এর উত্তর খুবই সহজ। হাওরের রাস্তায় যে রঙ দিয়ে আলপনা করা হয়েছে তা বৃষ্টি এবং রোদের কারণে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই রাস্তা থেকে উঠে যাবে এবং বৃষ্টির কারণে রাস্তার দুধারের হাওরে গিয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে আরেকটি দুঃসংবাদ হল যেখানে মানুষের সরাসরি ফেলা বর্জ্য যেমন পলিথিন বা প্লাস্টিক পণ্যের মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হতে সময় লাগে সেখানে প্লাস্টিক পেইন্ট খুব সহজেই অল্প কিছু দিনের মাধ্যেই মাইক্রো প্লাস্টিকে পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সমূহ সম্ভাবনা আছে রাস্তা থাকা অবস্থাতেই এটি মাইক্রো প্লাস্টিকে পরিণত হবে এবং যখন বৃষ্টি হবে বৃষ্টির পানিতে তা ধুয়ে খুব সহজেই হাওরে নেমে যাবে। যদি বৃষ্টির কারণে নাও নামে। রোদ এবং বাতাসের কারণেও তা কণা আকারে হাওরের পানির সাথে মিশে যেতে পারে। অর্থাৎ প্লাস্টিক পেইন্ট ধুয়ে যখন পানিতে মিশে যাবে তখন শুধু তা খাদ্য হিসেবেই গ্রহণ করলে তা মাছের দেহে প্রবেশ করবে ব্যাপারটি এরকম নয় বরং এ বিষয়টি আরো ভয়ানক হতে পারে।

হাওরের রাস্তাজুড়ে এরকম আল্পনার খুব অল্প অংশই শেষ পর্যন্ত টিকবে। প্রায় পুরোটারই গন্তব্য হবে হাওরের সাদু পানি। ছবিটি দৈনিক আজকের পত্রিকা থেকে নেওয়া।

অর্থাৎ পুরো পানিই মাইক্রোপ্লাস্টি সমৃদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। মাছ সহ যেকোন প্রাণীর পক্ষে তখন এই প্লাস্টিক গ্রহণ করা অতি সহজ হয়ে দাঁড়াবে। যেমনঃ এই পানির মধ্যে যত প্রাণী থাকবে সাপ, ব্যাং সহ নানা উভচর প্রাণী তারা সবাই মাইক্রো প্লাস্টিক দ্বারা সরাসরি আক্রান্ত হয়ে পড়বে। এজন্য আর মাছ ভক্ষণ করার প্রয়োজন পড়বে না।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, রঙ দ্বারা পরিবেশ দূষণ আসলেই চিন্তার বিষয় কিনা।

এর উত্তর হল অবশ্যই এটা এক চিন্তার বিষয়। ২০২২ সালের এক গবেষণাতে দাবি করা হয় সমুদ্রের মাইক্রোপ্লাস্টিকের সবচেয়ে বড় উৎস হল এই রঙ। সমুদ্রের মোট মাইক্রোপ্লাস্টিকের মধ্যে শতকরা ৫৮ পার্সেন্ট হল এই রঙ বা পেইন্ট থেকে আসা। গবেষকেরা বলেন, .৯ মিলিয়ন টন রঙ প্রতি বছর সমুদ্র এবং অন্যান্য পানির উৎসে গিয়ে মিশে থাকে।

এছাড়া আরেকটি গবেষণাতে বলা হয় সামুদ্রিক এলাকার শহরগুলোর রঙ এর উপাদান যা সমুদ্রে গিয়ে মিশে তা মূলত আসে রাস্তার রান অফ সাইন , তারপর বিল্ডিং এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম থেকে। প্লেইমাউথ ইউনিভার্সিটির (Plymouth University) এনভায়োরেনমেন্টাল সায়েন্সের প্রফেসর অ্যান্ড্রু টার্নার ( Andrew Turner ) বলেন, “রঙ এর প্লাস্টিক উপাদান অনেক সময় এড়িয়ে যাওয়া হয় কিন্ত আমাদের গবেষণার মাধ্যমে দেখানো হয় যে সমুদ্রে এদের পরিমাণও বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে

রঙ এ কেমিক্যাল এর ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ছবিটি শেরপুর নিউজ নামক ওয়েব সাইট থেকে নেওয়া।

 

হাওরের রাস্তার আলপনা করতে ব্যবহার করা হয়েছে মোট ১৬ হাজার লিটার লাল, নীল, বেগুনি , হলুদসহ নানা রঙ এছাড়া তিন ধরণের ৪০০ ব্রাশ ও তুলি । এগুলোর পরিবেশগত হুমকি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকতে পারে তা রীতিমত ভাববার বিষয়। অর্থাৎ যে সৌন্দর্য আপনার চোখের নিকট নান্দনিক হলেও বাস্তবে তা পরিবেশের জন্য ধ্বংসের কারণ হতে পারে। প্রথম কথা হল, এই রঙ বড় একটা অংশই তৈরি করা হয় টক্সিক বা বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে। অর্থায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের পাশাপাশি হাওরের পানিতে বিষাক্ত উপাদান মিশে যাওয়ার যে সম্ভাবনা রয়েছে তা আদৌ কি এড়ানোর কোন উপায় রয়েছে ? এর সম্ভাব্য এক মাত্র উত্তর, না।

তৃতীয় প্রশ্ন হল, রাস্তাতে রঙ করার পরিবেশগত ঝুঁকি নিয়ে পূর্বেও প্রশ্ন এসেছে কিনা।

হাঁ, অবশ্যই এসেছে। পরিবেশবাদিরা বহু আগে থেকেই এই বিষয়টিকে আলোচনাতে আনার চেষ্টা করে আসছে । এর আগে ২০১৬ সালের একটি গবেষণাতে বের হয়ে আসে যে বৃটেনের নদী এবং লেকসমূহ রোড মার্কিং করা রঙ এর প্লাস্টিক উপাদান দ্বারা ক্রমান্বয়ে দূষিত হয়ে উঠছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের গন্তব্য যেন মেরিন লাইফ কে ক্ষতি করতে না পারে এজন্য বহু আগেই ইউ কে সরকার কসমেটিকে মাইক্রোবেড নামক প্লাস্টিক উপদানের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্ত নতুন গবেষণাতে নদীর পলি নিয়ে প্লাস্টিক সমৃদ্ধ হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে এবং এর বড় একটি পরিমাণ এর মূল উৎস হল রঙ এর প্লাস্টিক উপাদান। এবং এগুলো মূলত আসে রাস্তায় বিভিন্ন সাইনের জন্য ব্যবহার করা রঙ থেকে। গবেষকেরা থেমস ভ্যালীর চারটি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে । সবচেয়ে দূষিত যে এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয় সেখানে ১০০ গ্রাম এর মধ্যে ৬৬ টি মাইক্রোপ্লাস্টিক উপাদান পাওয়া যায়। যা নমুনা দূষিত হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য যথেষ্ট। সবচেয়ে পরিষ্কার এলাকা থেকে যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সেখানে ১০০ গ্রামের মধ্যে ১৮.৫ টি মাইক্রো প্লাস্টিক উপাদান পাওয়া গিয়েছে। এই গবেষণাটি করতে গিয়ে গবেষকেরা সত্যিকারিই আশ্চর্য হন কেননা, যে সব এলাকাতে খুব কম পরিমাণ মানুষের বসবাস সেখানকার নমুনাতেও তারা মাইক্রো প্লাস্টিকের উপাদান পায়। তারা এমন কিছু উপাদান পায় যা তাদেরকে কিছুটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল কেননা তা দেখতে সাধারণ মাইক্রোপ্লাস্টিকের মত ছিল না। এই উপাদানগুলো তাদের কপালে ভাজ ফেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উপাদানগুলো এরকম নয় যা সেখানে থাকা উচিত কিন্ত আবার তা মাইক্রো প্লাস্টিকের মতও দেখতে নয় যা সাধারণত প্লাস্টিকের বোতল বা প্লাস্টিকের কোন কিছু থেকে পাওয়া যায়। এরপর তারা এই উপাদানকে আরো ভালোভাবে বুঝার জন্য স্পেক্টোস্কোপির ব্যবহার করে। এবং বেশিরভাগ উপাদানেরই মূল রঙ হল লাল এবং হলুদ দেখতে পায় তারা। এবং এরা আকারে এক থেকে চার মিলি মিটার পর্যন্ত। এবং এরপর তারা এই উপাদানগুলোকে আশপাশের রাস্তায় করা রঙ এর উপাদানের সাথে মিলিয়ে নিশ্চিত হন যে এগুলোর মূল উৎস এই রাস্তাগুলোই যে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এই রিসার্চটি যার নেতৃত্ত্বে হয় ড. হর্টন তিনি বলেন, খুব ছোট অমেরুদন্ডী প্রাণী কিংবা শামুক জাতীয় প্রাণী হয়তবা এগুলো খাবে না কিন্ত যে প্রাণী সমূহ মূলত অন্য প্রাণীর মৃতদেহ খেয়ে বেঁচে থাকে যেমন মাছ বা নানা জাতের পাখি তারা এগুলো খেতে পারে। এটা অবশ্যই চিন্তার বিষয় যে এই উপাদানগুলোকে নদীতে পাওয়া গিয়েছে এর সাথে নানারকম টক্সিক কেমিক্যাল থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে এবং এটাকে অবশ্যই দূষণ বলতে হবে। 

অর্থাৎ রাস্তায় রঙ করার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ হওয়ার বিষয়টি নতুন নয় যে আলপনার বিরুদ্ধে কথা বলাকে হঠাৎ সচেতনহিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। বরং পরিবেশ নিয়ে যারা সচেতন তারা বরাবরই নানা জাতি গোষ্ঠীর এরকম অসংলগ্ন আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছে। এবং পরিবেশ কর্মীদের এটাই মূলত কাজ। আরো দুশ্চিন্তার বিষয় হল, যে পরিবেশ নিয়ে এই ছেলেখেলার বিষয়টি নেওয়া হয়েছে তিনটি বড় মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেট কোম্পানির দ্বারা। কোনমতেই তাদের এরকম উদ্যোগ নেওয়া উচিত হয়েছে বলে আমি মনে করিনা। কেননা অন্যান্য কর্পোরেট কোম্পানিগুলোও একই রকম উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে।

রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার দায়ভার যাদের পরিবেশ নিয়ে অথোরিটি পজিশনে থেকে যাদের এ নিয়ে কথা বলার দরকার ছিল তারা কেন এই কোম্পানিগুলোর এরকম দূষিত পদক্ষেপে অংশ নিল সেই প্রশ্নও আসা উচিত। তাহলে পরিবেশ নিয়ে প্রতি বছর যে সচেতনতার ক্যাম্পেইন চালানো হয় তা কি শুধুই সাধারণ জনগণের জন্য !

আরেকটি ব্যাপার হল এই রঙ উতপাদনে যে পরিমাণ কার্বনের ব্যবহার হয়েছে তার একটা অংশও কল্যানমূলক কাজে ব্যবহার হল না। অর্থাৎ এটা পুরোটাই অপচয় বলা যেতে পারে। রঙ এর মূল উদ্দেশ্য হল বাসা বাড়ি বা বিভিন্ন স্থাপনা রঙ করা কিন্ত এখানে তা না করে আলপনার নাম দিয়ে রাস্তা রঙ করা হল অর্থাৎ এই ব্যবহৃত রঙ উতপাদনে যে পরিমাণ কার্বনের ব্যবহার হয়েছে সে একই পরিমাণ কার্বন দ্বিতীয়বার ব্যবহার হবে এই একই পরিমাণ রঙ উৎপাদন করতে গিয়ে। অর্থাৎ মাঝখান থেকে বায়মন্ডলে কার্বনের পরিমাণও বেড়ে গেল।

চতুর্থ প্রশ্ন হল, পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে গিনেজ বুকে নাম লেখাতে হবে কেন ?

যাদের গিনেজ বুকের রেকর্ড সম্পর্কে জানাশোনা আছে তারা জানেন যে, গিনেজ বুকে বিভিন্ন অদ্ভুতূরে কর্মকান্ডের মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়। কিন্ত পরিবেশের দূষণের কারণে যদি কোন রেকর্ড উঠে আসে তাহলে আমার মনে হয় এই ট্রেন্ডের শুরুই হবে এই রেকর্ডের দ্বারা। যে পরিমাণ অর্থের ব্যয় হয়েছে এই পদক্ষেপের জন্য , সে পরিমাণ অর্থ দিয়ে সামাজিকভাবে নানা রকম কল্যাণমূলক কাজ করা যেত যা দ্বারা হয়তবা সরাসরি উপকৃত হতে পারত আপামর জনসাধারণ। দেশের মানুষদের একদিনের জন্য পুষ্টিহীনতা কমানোর উদ্দেশ্যে আমিষের চাহিদা মেটানো যেত। যদি গিনেজ বুকে ভাল কোন কাজ দিয়ে নাম লেখানোই উদ্দেশ্য থাকত তাহলে সেক্ষেত্রেও হয়তবা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেডিক্যাল ক্যাম্পেইনের মত নানারকম কল্যান মূলক উদ্যোগ নেওয়া যেত। কিন্ত পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে গিনেজ বুকে নাম লেখানোর চেষ্টা আরো পরিবেষ দূষণ কে বাড়িয়ে দিবে। পৃথিবীর নানা মানুষ হয়তবা ভবিষ্যতে এর থেকেও বড় আল্পনার মাধ্যমে এই চৌদ্দ কিলোমিটার আলপনার রেকর্ড ভাঙ্গার চেষ্টা করবে। তাদের হয়তবা টার্গেট হতে পারে বিশ বা ত্রিশ কিলোমিটার। এবং সেই টার্গেট যেখানেই নেওয়া হোক না কেন, তা আমাদের পৃথিবীর জন্যই যে অকল্যাণ বয়ে আনবে এ ব্যাপারে মনে হয় না কোন সন্দেহ থাকতে পারে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যেখানে বনের নিরীহ প্রাণী লোকালয়ে পেলে পিটিয়ে মারে সেখানে এরকম অদ্ভুতূড়ে কান্ড পরিবেশ এবং প্রকৃতি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি তো করবেই না বরং পরিবেশকে আরো হুমকির মধ্যে কিভাবে ফেলা যায় তা নিয়ে নানা দিক বের হবে। বিশ্বের দরবারে নাম, সরকারের চোখে সুনজর ইত্যাদি খামখেয়ালিপনাই যেখানে মূল উদ্দেশ্য সেখানে পরিবেশের গুরুত্বই বা কতটুকু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *