অ্যাপল টিভি প্লাসের ব্রান্ড নিউ সিরিজ “টাইনি ওয়ার্ল্ড’ বা ‘ক্ষুদ্র বিশ্বের’ রিভিউ

অ্যাপল টিভি প্লাসের ব্রান্ড নিউ সিরিজ “টাইনি ওয়ার্ল্ড’ বা ‘ক্ষুদ্র বিশ্বের’ রিভিউ

Spread the love

নেচার এবং ওয়াইল্ড লাইফ সিরিজের কাটতি গত কয়েক বছর ধরে বেশ ভালোর দিকে। প্রতি বছরই এই রিলেটেড ডকুমেন্টারির কোন না কোন সিরিজের কোন না কোন পর্ব বিভিন্ন মেইনস্ট্রীম প্রতিযোগিতায় রীতিমত নমিনেশন পাওয়ার পাশাপাশি পুরষ্কারও নিয়ে নিচ্ছে । বাফটা, এমির মত প্রধান প্রধান অ্যাওয়ার্ড শোতে বাঘ , ভাল্লুক নিয়ে নমিনেশন পাওয়াটা চাট্টিখানি কথা না। যাই হোক, ডিজনি, নেটফ্লিক্সের মত অ্যাপলও গত বছর অসাধারণ কিছু ওয়াইল্ডলাইফ সিরিজ নিয়ে ডকুমেন্টারি উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমার এই রিভিউ Apple TV + এর ‘Tiny World’ নিয়ে। অ্যাপল এটা নিয়ে আসে অক্টোবর এর দুই তারিখে। সে হিসেবে বলতে পারেন এটা কিছুটা লেট রিভিউ। আর এর ট্রেইলার প্রচার করা হয় সেপ্টেম্বরের দশ তারিখে [১] ।‘Tiny World’ নামেই বুঝা যায় এই ডকুমেন্টারিটা সব ছোট ছোট প্রাণী নিয়ে। বাঘ ভাল্লুক নিয়ে যতটা আলোচনা করা হয় এই ছোট প্রাণীদের নিয়ে অত আলোচনা করা হয় না। যদিও বায়োডায়ভার্সাটির অন্যতম মূল উপাদান ছোট থেকেই শুরু হয়। এই রিলেটেড ডকুমেন্টারি পূর্বেও কিছু এসেছে। কিন্ত যেহেতু এটা ২০২০ তাই বলাই যায় এই ডকুমেন্টারিতে নতুন প্রযুক্তির ছোয়া থাকবে। এবার রিভিউ শুরু করা যাক।

রিভিউ এর আগে আমার ব্যক্তিগত কিছু পছন্দ অপছন্দের ক্রাইটেরিয়া তুলে ধরছি। প্রথম হল, ট্রেইলারে যেভাবে সিনেমাটোগ্রাফি তুলে ধরা হয়েছে তা সত্য হতে হবে। দুই হল, নতুন তথ্যের প্রচার থাকতে হবে। তিন হল, কনজারভেশন নীতির বহির্ভূত এরকম কিছু প্রচার করা যাবে না। চার হল, ভুল তথ্য প্রচার করা যাবে না।

ছয় পর্বের এই সিরিজে সবচেয়ে যে বিষয়টা ভালো লেগেছে তা হল এর টাইম ডিউরেশন। প্রত্যেকটা পর্ব ত্রিশ থেকে বত্রিশ মিনিটের। মানে আপনি বিবিসি এর ডকুমেন্টারিগুলোর মত হাপিয়ে উঠবেন না। ছয়টা পর্বের নাম হল যথাক্রমে Savannah, Jungle, Island, Outback , Woodland এবং Garden.

প্রত্যেকটা পর্বের এক অসাধারণ দিক হল পর্বগুলো শুরু করা হয় কোন এক নির্দিষ্ট প্রাণী থেকে। তারপর এই প্রাণীর সাথে অন্যান্য ছোট বড় সব প্রাণী কিভাবে একে অপরের সাথে সম্বন্ধযুক্ত তা তুলে ধরা হয়। যেমনঃ প্রথম পর্ব সাভানাহর এলিফ্যান্ট শ্রু (Elephant shrew) দিয়ে শুরু করা হয়। এই ছোট প্রাণী কি করে নিজেকে বড় প্রাণীদের খাবার হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করে ঠিক একইভাবে কিভাবে খাদ্য সংগ্রহ করে তা দেখানো হয়। এই প্রাণী কিভাবে অন্য প্রাণীর সহায়তা নিয়ে নিজেকে রক্ষা করে তা দেখানো হয়। একইভাবে বামন বেজি কে দেখানো হয় যে কিভাবে বামন বেজি আর হর্নবিল পাখি এক হয়ে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। অনেক কিছুই প্রতিটা পর্বে দেখানো হয় যা একেবারেই নতুন কিছু।

দ্বিতীয় পর্বে ফুটিয়ে তোলা হয় সেন্ট্রাল আমেরিকার কোন এক জঙ্গলের ছোট প্রানীদের। সবেচেয়ে ছোট বানর ( Pygmy marmoset) কি করে অন্য ছোট প্রাণীদের উপর নির্ভর করে বেচে থাকে আর কি করে অন্য বড় বানরদের থেকে নিজেকে রক্ষা করে তা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়। ফায়ার বেলিড গ্রাউন্ড সাপ ( Fire bellied Ground snake) কিভাবে স্ট্রবেরি ডার্ট ফ্রগ (Strawberry dirt frog) এর বাচ্চাকে কিভাবে নিজের শিকার বানায় আর স্ট্রবেরি ডার্ট ফ্রগ কি করে নিজের বাচ্চাকে (tadpole) চল্লিশ মিটার গাছের চূড়োয় রেখে আসে। তা সবই প্রথম ফুটেজ। এই মার্গেই বিড়ালের ( margay) শিকার চেষ্টা দেখানো হয়। এটা খুবই রেয়ার ফুটেজ। একেকটা পর্ব ফার্স্ট এভার ফুটেজে ভর্তি।

 

তিন নাম্বার পর্ব আইল্যান্ডের পর্বটি হয় ক্যারিবিয়ান কোন আইল্যান্ডের ছোট প্রাণীদের জীজগত নিয়ে। এখানে রিসেন্ট কিছু স্ট্যাডি যা আমরা মাত্র কয়েকদিন আগে পেপার পড়ে জানতে পারি তাঁর কিছু সচিত্র ফুটেজ তুলে ধরা হয়। হারিকেনের মত বড় ঝড়ে কি করে ছোট টিকটিকিরা টিকে থাকে তা দেখানো হয়। তারা ক্রমাগত পরিবর্তনের কারণে ঝড়ের তীব্র হাওয়ার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখেছে। এর প্রত্যেকটা ফুটেজ না ভোলার মত। থ্রেড স্নেক বা ব্রাহ্মনী সাপ পিপড়ে আর টার্মাইট খেয়ে বেচে থাকে কিন্ত কি করে অত ছোট মুখ দিয়ে খায় তার হাই রেজুলাইজড ওয়াইল্ড ভিডিও এই প্রথম দেখানো হল।

চতুর্থ পর্বে দেখানো হয় অস্ট্রেলিয়ার জীবজগত নিয়ে যেখানে দেখানো হয় ল্যাংলেস লিজার্ড পা বিহীন গিরগিটির শিকার খোঁজা। অসাধারণ দৃশ্য ছিল গোল্ডেন টেইল্ড গেককোর আত্মরক্ষার দৃশ্য এই প্রথম দেখলাম। আমার ধারণাই ছিল না যে কোন টিকটিকি নিজেকে এভাবে রক্ষা করতে পারে।

পঞ্চম পর্ব পরিবেশন করা হয় নর্থ আমেরিকার কোন এক বন কে সামনে রেখে। এই পর্বে অনেক কিছু খুব সাধারণ মনে হলেও এর সিনেমাটোগ্রাফির জন্য উপভোগ্য ছিল।

ছয় নাম্বার পর্বে দেখানো হয় ইউরোপের কোন এক স্থানের এক বাগান কে নিয়ে। এক বাগান কে কেন্দ্র করে যে কত ধরণের প্রাণী তাদের জীবনকে আবর্তিত করে তা ক্ষুদ্র চোখ দিয়ে না দেখলে বুঝা যাবে না। মানুষের ঘরের সামনের বাগান যে কত ছোট প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে কাজে লাগছে সে আইডিয়া আমাদের অনেকেরই নেই।

পুরো সিরিজের কিছু বিহাইন্ড দ্যা সিন বা স্টেজের পিছনের ঘটনা তুলে ধরছি।

তিন নাম্বার পর্বে কোকি ব্যাং (coqui frog) এর ফাইট দেখানো হয়। একটা শামুক কোকি ব্যাং এর ডিম খেতে আসলে পুরুষ ব্যাং তার সাথে এক রকম কিকবক্সিং করে হারিয়ে দেয়। কোকি ব্যাং এর আত্মরক্ষামূলক চরিত্রের এরকম ভিডিও এই প্রথম ধারণ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় পর্বে মিডওয়াইফ টোডের গাছের মগডালে এসে ব্রোমেলিয়াড প্লান্টে জমে থাকা পানিতে ব্যাঙ্গাচি ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্যটিও এই প্রথম ধারণ করা হয়। [৩]

সবকিছু মিলিয়ে আমি এ সিরিজ কে দশে আট দিব। এর স্টোরি টেলিং, এর সিনেমাটোগ্রাফি এর পরিকল্পনা, টাইম ডিউরেশন সবকিছু এক কথায় অসাধারণ। এটা একটা পায়োনিয়ার প্রজেক্ট।কিন্ত তারপরেও দশে সাত দেওয়ার অন্যতম কারণ হল, আমার মতে এই ডকুমেন্টারিসমূহ শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য বানানোর সুযোগ এখন আর নেই। ভাল লাগেনা ন্যাটজিও খুলে বাঘ মহিষের ভিডিও দেখে টাইম পাস করলাম এখন আর সেই সুযোগ টা নেই। এখনকার ডকুমেন্টারিগুলোতে একটা মেসেজ থাকা প্রয়োজন যে কিভাবে এই অপ্রতিরোধ্য প্রাণীদের আমরা চলমান ষষ্ঠ বিলুপ্তি ঘটনা থেকে রক্ষা করতে পারি। পৃথিবীর চলমান পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মখীন এই ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর প্রাণীরা। এদের জন্য দুমিনিট বাড়িয়ে একটা মেসেজ দিলে সেটা মন্দ হত না।

তবে এ সিরিজের ব্যাপারে সুসংবাদ হল এই যে , এই সিরিজের প্রথমেই বারোটা পর্ব বের হওয়ার কথা। কিন্ত Apple Tv আপাতত ছয়টি পর্ব ছেড়েছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়িই আরো ছয়টা পর্ব পেতে যাচ্ছি আমরা।

তথ্যের সোর্সঃ 

[১] https://www.youtube.com/watch?v=oGNb4d6UdeU

[৩] https://www.radiotimes.com/tv/documentaries/2020-10-01/tiny-world-facts-apple-tv/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *