টমেটো থেকে চড়ুই হয়ে ধারমারা গাছ।এ এক বিশাল লিস্ট !

টমেটো থেকে চড়ুই হয়ে ধারমারা গাছ।এ এক বিশাল লিস্ট !

Spread the love

বাসা বদলানোর কারণে গত সপ্তাহ আমাদের তুমুল ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যায়। নতুন বাসাতে আসার পূর্বে আমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম , মা ! তুমি নতুন বাসাতে গিয়ে পুরানো বাসার কী কী মিস করবে ? তার অবুঝ উত্তর ছিল, টমেটো ! হয়তবা , সে মিস করার মানেই বুঝে উঠেনি আর নয়তো সে ধরেই নিয়েছে তার বাবা ইদানীং যে বেশি বেশি টমেটো কিনছে তা মূলত এই বাসাতে থাকার কারণেই সম্ভব হয়েছে। নতুন বাসাতে গেলে তার বাবা হয়তবা আর এরকম টমেটো কিনে আনতে পারবে না। মেয়েকে অবশ্য এতকিছু বুঝানোর সুযোগ হয় নি যে বাজারে টমেটো সব সময়েই পাওয়া যায় কিন্ত বছরের এই সময়টাতে এসে টমেটোর দাম কমে মধ্যবিত্তের ক্রয়সীমার মধ্যে পৌছায়। তাই যা কিছুই কেনা হোক না কেন এই সময়টাতে টমেটো আর মিস হয় না।

যাই হোক, মেয়ের জবাব শোনার পরে আমি বললাম আমি কী মিস করব তাহলে তা তোমাদেরকে বলি। আমি মিস করব আমাদের সামনের বাথরুমের চড়ুইগুলোকে। আর বাসার পিছনে পাহাড়ে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল ধারমারা গাছকে। আমরা এই বাসাতে উঠি প্রায় আড়াই বছর হয়। আর এই আড়াই বছরেই আমাদের সঙ্গী হয়ে ছিল সামনের বাথরুমের জানালাতে থাকা এক জোড়া চরুই। এই চড়ুই যে কত জেনারেশন এখানে বাচ্চা দিল সে হিসেব আমরা রাখতে পারি নি। কিন্ত নতুন বাচ্চা এলেই বুঝতে পারতাম।

মাঝেমধ্যেই চড়ুই রুমের ভিতরে চলে আসত। এজন্য ধরে আদর করে আবার ওর বাসাতে রেখে আসতাম। ছবিটি আমার ( Saowabullah Haque) তোলা।

সূর্যের আলো স্পষ্ট হওয়ার সাথে সাথে চড়ুইয়ের বাচ্চাগুলো ডেকে উঠত। আবার কখনো রাতে যখন মা আর বাচ্চা উভয়ের বিশ্রামের সময় তখন বাথরুমের লাইট ওন করা মানেই পাখির ডিস্টার্বের সিগনাল শুরু করা। মাঝমধ্যে বাথরুমের দরজাটা খোলা রাখলেও তাদের বিরক্তির সুরে ডাকাডাকি শুনতে হত। মাঝেমধ্যে হয়তবা ভুল করেই তারা ঘরের ভিতরে চলে আসত।

 

আহত চড়ুই। খুব যত্ন করে ওর পায়ে আমরা হলুদ লাগিয়ে দিয়েছিলাম। ছবিটা আমার তোলা ( Saowabullah Haque)

একবার এক চড়ুই ভিতরে চলে আসে আর ফ্যান বন্ধ করার পূর্বেই চড়ুইটি ফ্যানের পাখার সাথে বাড়ি খেয়ে আহত হয়ে আমার টেবিলের উপর এসে পড়ে। খুব যত্ন নিয়ে আমি, আমার স্ত্রী, কন্যা, পুত্র অর্থাৎ পুরো ফ্যামিলি নিয়ে চড়ুইয়ের পায়ে হলুদ দিয়ে দেই। হলুদ দিয়ে তাকে তার ঘরে রেখে আসি।

একবার বাড়িতে গিয়ে দীর্ঘ এক বিরতির পরে বাসাতে আসি। বাসাতে এসে বাথরুমের বালতিতে দেখি একটি চড়ুই মরে পড়ে আছে। মৃত চড়ুইটি উঠাতে যাই আর তার পুরো শরীর বিচ্ছিন্ন হয়ে পানিতে গলে যায়। তার প্রতিটা উপাদান যেন অপেক্ষায় ছিল কারো স্পর্শের জন্য। চড়ুইয়ের প্রতিটা অঙ্গ যে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে    বাস্তবিকে আলাদা হওয়ার জন্য আমার অপেক্ষাতেই ছিল। আমার আফসোস হল, বালতিতে কেনই বা পানি রেখে গেলাম। আর কেনইবা চড়ুইটি বালতিতে পড়ে আর উঠতে পারল না।

 

তবে চড়ুইয়ের সাথে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং যে ঘটনা ঘটে এবং যে ঘটনাটা না বললে মনে হবে মূল ঘটনাই তো বলা হল না সেটা যদি না বলি তাহলে সেই চড়ুইগুলোও মনে হয় দু:খ পাবে। চড়ুই আর বাবুই পাখির সেই কবিতাটার কথা মনে আছে তো আপনাদের ? শিশুকালের কবিতা ভুলে যাওয়ার কথা তো নয়। ঐ কবিতা পড়লে যে কারো মনে হতে পারে চড়ুই মানুষের অট্রালিকাতে গিয়ে এমনিই পড়ে থাকে। অর্থাৎ মানুষের সোফা পাতানো থাকে কিংবা চকি কিংবা খাট বিছানো থাকে আর চড়ুই করে কি সেখানে গিয়ে নাক ডেকে ঘুমায়, ডিম পারে আর বাচ্চা ফুটায়। আর বাবুই মশাই খুব কষ্ট করে নিজের ঘর বানায়। কিন্ত বাস্তবতা বলে বাবুইয়ের মত বেচারা চড়ুই পাখিও নিজের ঘর নিজেই বানায়। বাবুই যেখানে নিজের ঘর বানায় তাল, নারিকেল গাছকে কেন্দ্র করে। চড়ুই বানায় গাছ, বিল্ডিং, ল্যাম্প পোস্ট, মাইক, ওয়াল , ঘর, চৌচালা ইত্যাদি হরেক রকম জিনিসকে কেন্দ্র করে। চড়ুই তার বাসাতে কোন আর্ট কিংবা শিল্প রাখে না। তার বাসা হয় মেসি, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। আর অন্যদিকে বাবুই হল আর্ট বাবু। বাবুই আর্ট মাস্টার বলেই নারিকেল, তাল না থাকলে তার জন্য বিপদ। কেননা বেচারা আবার আর্ট ছাড়া ঘর বানানো শিখে নাই। অন্যদিকে চড়ুই হল টিকে থাকার মাস্টার। দু’দিনের দুনিয়ায় আর্ট দিয়ে কি হবে ? কচু! টিকে থাকাটাই বড় কথা। কোন রকমে এক কোনায় বউটারে নিয়ে পড়ে থাকতে পারলেই হল। যাই হোক, তো স্বাভাবিক হিসেবেই আপনি যখন চড়ুইকে বাসা বানাতে দেখবেন তখন খুশি না হওয়ার জন্য যদি কোন কারণ থাকে তাহলে একমাত্র কারণ হবে আপনার ঘর নোংরা হল বলে। আমাদের সামনের বাথরুমের অবস্থাটাও যা করে রেখেছিল না ! তা আর নাইবা বললাম। এজন্য একটা সময় ঐ বাথরুমটা চড়ুই ফ্যামিলিকে উৎসর্গ করে দেই।

 

তো, একবার কি হল ? আমরা বুঝলাম চড়ুই যে বাচ্চা দিয়েছিল সেটা বড় হয়েছে আর উড়ে গেছে। চড়ুইয়ের কোন সাড়া শব্দও পেলাম না। আমার বউ বলল, ওরা মনে হয় চলে গেছে। তাই চল ওর ঘরটা নামিয়ে বিনে রেখে দেই। আমিও একমত পোষণ করলাম। না করে উপায়ও ছিল না। যে নোংরা ওরা করে রাখত সেই নোংরা দেখার পর ওদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার উপায় ছিল না। তো, সেটা বুঝেই ওর পুরো ঘর নিয়ে আসলাম। নিয়ে এসে বিনে আপাত ফেলে রাখলাম। বাথরুম পরিষ্কার করলাম। আধা ঘন্টা যেতে না যেতেই আমার বউ আমাকে মন খারাপের সুরে ডাক দিল। আমাকে দেখাল বাসাটা যেখানে ছিল ঠিক সেখানে একটা চড়ুই এসে বসে আছে ! আমাকে সে বলল, কি অন্যায়টাই না আমরা করে ফেললাম ! আমি বললাম, সমস্যা নেই। চড়ুই মানুষের এসব আচরণে অভ্যস্ত। এসব দেখে দেখেই ওরা এতদিন মানুষ নামক দোপেয়ে দৈত্যটার সাথে কিভাবে মানিয়ে নিতে হয় সেটা  রপ্ত করে নিয়েছে। বাসাটাতো এখনো আছে। ওখান থেকে এনে রেখে দিলেই হবে। সেটাই করলাম। বাসার অগোছালো অংশ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মূল উপাদান গোল  যেটা সেটা রেখে আসলাম। দুদিন যেতে না যেতেই চড়ুই আবার নতুন করে দুনিয়ার সবচেয়ে কুৎসিত বাসাটা বানানো শুরু করে দিল। কোথা থেকে যে কি নিয়ে আসে নিজের কাছেও আশ্চর্য লাগত।

 

 

 

চড়ুই নিকটে বাসাটাই মূল কথা। আর্ট থাকল কিংবা না থাকলে তাতে কিইবা আসে যায়। ছবিটি আমার তোলা (Saowabullah Haque).

যাই হোক, ঐ বাসাতে নতুন করে কে উঠবে জানি না। আমরা যেভাবে চড়ুইকে আশ্রয় দিয়েছিলাম অন্যরা একইভাবে আশ্রয় দিবে সে আশাই রাখি। তবে চড়ুইকে আশ্রয় দিয়েছি এর পিছনে গুরুত্বপূর্ণ যে কারণ ছিল তাহল আমাদের নিকট মনে হত  খোদাতায়ালার কোন আযাব যদি আসে তাহলে হয়তবা সেই আযাব এই নিরীহ নিষ্পাপ চড়ুইগুলোকে দেখে আমাদের স্পর্শ না করে চলে যাবে। চারটার মত সাইক্লোন এক সাথে কাটিয়েছি। এরমধ্যে একটা ছিল ম্যাসিভ সাইক্লোন। এক সাইক্লোনের সময় চড়ুই ঘরের ভিতরে চলে এসেছিল। এত স্মৃতি আর কোথায় রাখি !

আলোচ্য ধারমারা গাছ। ছবিটি আমার তোলা।

আর পিছনের ধারমারা গাছ সেতো আরেক হিস্টোরি ! এই গাছের সাপের মত লম্বা লম্বা ফল দেখে প্রথমেই আশ্চর্য হয়েছিলাম যে এটা কী গাছ। কেউ নামও বলতে পারে না। আশ্চর্য যে সঙ্গীকে দেখে আপনারা ছোট থেকে বড় হলেন সেই সঙ্গীর নামটা আপনারা জানেন না। পাহাড়ে যখন বৃষ্টি হত তখন গাছটার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতাম। কিভাবে বৃষ্টির পানিগুলো পুরো গাছটাকে ভিজিয়ে দেয়। যতবার বারান্দাতে যেতাম ততবারই এই গাছের পরিচয় জানার জন্য তীব্র আকাঙ্খা তৈরি হত । সাপের মত লম্বা লম্বা ফল দেয় অথচ এই গাছের নাম জানি না ! আশ্চর্য। একবার পাহাড়ে আগুন লাগল। পুরো পাহাড় আগুনে পুড়ে ছাই। কিন্ত গাছটির বিশেষ কোন ক্ষতি হয় নি।

 

সে যেন এরকম আগুনে আগে থেকেই অভ্যস্ত। আরেকবার পাহাড়ে মাটি কাটা শুরু হল। যারা মাটি কাটা শুরু করল তাদের মাটি কাটার ঢঙ ছিল ভারি অদ্ভুত। পর্দা দিয়ে তারা পাহাড়ের মাটি কাটত। রাতের বেলা মাটি কাটত। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম ! তারা মাটি কাটতে কাটতে ঐ লম্বু গাছটাকে কেটে ফেলবে না তো। আশপাশের মানুষ এই মাটি কাটা দেখেও না দেখার ভান করছে। সকলের সামনে এক দল ডাকাত পাহাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে কারো টু শব্দ নেই ! আমি আশ্চর্য হলাম। আবার স্থানীয় কেউ নই এজন্য শক্তিশালী কোন ভূমিকাতেও নিজেকে আবির্ভূত করতে পারি না। একজন স্থানীয়কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা চুপ কেন ? তার জবাব ছিল। এখানে সবার বাড়িই পাহাড় কেটে করা। আপনি যে বাড়িতে থাকেন সেটাও পাহাড় কেটে করা।

এই ছবিটা তুলতে হয়েছে লুকিয়ে লুকিয়ে। তাদের লুকিয়ে পাহাড় কাটা দেখে নিজেই অস্বস্তিতে ভুগতাম। ছবিটি আমার ( Saowabullah Haque) তোলা।

আমি বুঝলাম এখানে আমি আর বিশেষ কিছু করতে পারব না। কেননা আমি উঠেছি পাহাড় খেকো মানুষদের মাঝে। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে বলতে যাওয়া মানে নিজের নিরাপদকেই হুমকির মধ্যে ফেলা। এজন্য যেদিনই ওদেরকে পাহাড় কাটতে দেখতাম সেদিনই আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করতাম, আল্লাহ্ আজকেই যেন ওদের শেষ পাহাড় কাটা হয়। অবশেষে কুতুবেরা পাহাড় কাটা একদিন থামালেন ।

বর্ষাতে যখন বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির পানি যেন ধারমারা গাছকে একটু আলাদা করেই বেশি ভিজিয়ে দেয়। ছবিটি তুলেছেন লেখক (Saowabullah Haque).

অবশেষে হাফ ছাড়লাম যে এইবারের মত লম্বা বড় দেখে গাছটা আপাত বেচে গেল। 

 

যাই হোক, গাছের পরিচয় পাওয়ার ব্যাপারটি কখনো দমে যায় নি। এজন্য পার্বত্য চট্রগ্রামের অঞ্চলের গাছগুলোর পরিচয় পাওয়ার জন্য আরণ্যক ফাউন্ডেশনের বিশাল এক বই যার নাম ‘ পার্বত্য চট্রগ্রামের বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষ পরিচিতি’ বইটা কিনে ফেললাম। তারপর বইটা কিনে মোটামুটি নিশ্চিত হলাম যে এটা ধারমারা গাছ। কিন্ত পুরোপুরি সিউওর হবার জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হল। ফেইসবুকের যে গ্রুপগুলো গাছের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ভূমিকা রেখে আসছে সেগুলোতে এই গাছের পরিচয় চেয়ে পোস্ট করব বলে প্ল্যান করলাম। কিন্ত বাঁধ সাধলো, এই গাছের ফল কিংবা ফুলের ভালো কোন ছবি আমার কাছে তোলা ছিল না। আবার পাহাড়ে যাওয়ার সহজ কোন রাস্তাও ছিল না যে পাহাড়ে গিয়ে সংগ্রহ করব। আবার যখন এমন মোবাইল কেনার সাধ্য হল যেটা দিয়ে দূর থেকেই সুন্দর করে ছবি তুলতে পারব ততদিনে গাছে ফলও নেই ফুলও নেই। যাই হোক, অপেক্ষা করতে লাগলাম। অবশেষে ছবি তুলে বাঙলার গাছ-গাছড়া নামক গ্রুপে ছবি পোস্ট করলাম। সেখানে নানা জনে নানা মত দিতে আরম্ভ করল। অবশেষে এটাযে ধারমারা গাছ তা ঐ নানা মতের মাঝেই নিশ্চিত হওয়া গেল। দীর্ঘ দিনের জিজ্ঞাসার জবাব পেয়ে নিজের কাছেও আনন্দ অনুভব হল। যাই হোক, এই গাছটাকেও মিস করব।
.
আরো অনেক জিনিসই মিস করব। এই বাসাতে প্রথম আমার তক্ষকের সাথে আই টু আই দেখা হয়। ওর নিকট কিছুদিনের জন্য আমি কৃতজ্ঞ ছিলাম কেননা বেচারা আস্ত বড় বড় তেলাপোকা খাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত। কিন্ত এজিনিস যে বাসাতে থাকার উপযুক্ত নয় তা প্রথম দিনেই বুঝি।

 তক্ষক সাধারণ টিকটিকির তুলনায় প্রায় দুইশ গুণ বড় মল ত্যাগ করে । অর্থাৎ টিকটিকির মলকে আমি নোংরা বলে ঝাড়ু দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারলেও তক্ষকের মলকে আপনি তা পারবেন না। কেননা এটা হল আদলা। আদলা পরিষ্কার করতে হলে আপনাকে কাগজ, টিস্যু এবং বেলচা নিয়ে নামতে হবে।

তক্ষকের মল। সাদা অংশ দেখে খুব সহজেই বোঝার কথা এটা টিকটিকি জাতীয় কিছুর মল। কিন্ত তাই বলে এত বড় ! ছবিটি আমার তোলা ( Saowabullah Haque).

 তারপরে আবার এ যেখানে থাকে সেখানে একে খাওয়ার লোভে সাপের চলে আসা। যার অনেক কিছুই আমি আমার ফেইসবুকে শেয়ার করি। তাই নতুন করে পুরানো আলাপগুলো আর নাইবা বললাম।

তক্ষকের সাথে চোখে চোখে রেখে প্রথম আমার দেখা হয় এই বাসাতেই। ছবিটি আমিই (Saowabullah Haque) তুলেছিলাম ঠিক সেদিন যেদিন ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়।

তবে আমার সন্তানেরা যে শুধু টমেটোই মিস করবে যদিও তারা মিস মানে কি তা বুঝে না। কিন্ত তারা এই ঘরের বেসিনের ওখানে থাকা গ্রে জাম্পিং স্পাইডার মিস করতে পারে। হয়তবা আমার কন্যা দরজার ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য ওয়াল স্পাইডার মিস করবে। যেদিন আমার মেয়ে ওয়াল স্পাইডারগুলো দেখতে পায় সেদিন ওর মুখভরা যে হাসি তা কি আর আমি ভুলতে পারি ! সে ওয়াল স্পাইডার দেখেই সিউওর হওয়ার জন্য তার এক মাত্র দু বছরের বড় ভাইকে ডাকে। তারা দুজনেই তখন খুশিতে আত্মহারা কেননা তারা হয়তবা তাদের বাবাকে এমন কিছুর সাথে পরিচয় করাতে যাচ্ছে যা তাদের বাবার নিকট সবচেয়ে নতুন কোন আবিষ্কার হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। হয়েছিলও তাই। আমার কল্পনাতেও ছিল না এত ছোট কোন মাকড়সা হতে পারে !

এই জাম্পিং স্পাইডারটার ছবি অনেক কষ্ট করে আমরা তুলেছিলাম। বেসিনটার ওখানেই ও সবসময় থাকত। ছবিটি আমার তোলা ( Saowabullah Haque)

তবে নতুন বাসাতে আমার সন্তানেরা ইতোমধ্যে একটি ঝলমলে বর্ণালী সমৃদ্ধ জাম্পিং স্পাইডার তারা আবিষ্কার করে ফেলেছে। যদিও তার বৈজ্ঞানিক নাম এখনো বের করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। অবশ্য আমরা অনেক মথও মিস করব। ঐ বাসাটা আমাদের জন্য অচেনা অপরিচিত নানা ধরণের মথের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার পুরো জীবনে এত বর্ণালী সমৃদ্ধ মথ দেখার সুযোগ হয় নি। যা গত আড়াই বছরে সম্ভব হয়।

দুই ভাই বোন মিলে বাসাতে বিশাল এক ওয়াল স্পাইডারের গ্যাং তারা আবিষ্কার করে ফেলে। তাদের কি যে আনন্দ সেদিন ! ছবিটি আমার (Saowabullah Haque) তোলা ।

আমার টেবিলের সাথে একটি প্রাণীর খুব নিকট সম্পর্ক ছিল। আমার টেবিলের এক পাশে কফি আর চিনির জার ছিল যে কারণে সর্বদা সেখানে সাদা পিপড়ের যাতায়াত থাকত। যে পিপড়ে নিয়ে আমি আগেও আমার ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে একবার বলেছিলাম। এই পিপড়েকে আমি আর কোথাও দেখতে পাই নি। এই কক্সবাজারেই প্রথম। ভূত পিপড়ে কিংবা ঘোস্ট অ্যান্ট নামে অদ্ভুত পিপড়েটি আমার জীবনে নতুন এক সংযোজন হয়ে রইল।

এই ভূত পিপড়েকে আমি আর কোথাও পাইনি। অনেক ছোট পিপড়ে। পিপড়েটির পিছনের অংশ সাদা হওয়ার কারণে একে আরো ছোট মনে হয়। ছবিটি আমার (Saowabullah Haque) তোলা।

.আর এরকম কিছু কি নেই যা পুরো পরিবার একসাথে মিস করব ? তা আর বলতে ! অবশ্যই , তেলাপোকা। আমার এক বছর তিন মাসের বাচ্চাটাও তেলাপোকাকে মিস করবে। তবে সেই মিস তারা উপভোগ করবে বলেই মনে হয়।  তেলাপোকা যে  আমাকে হিরো বানাত তা আমি উহ্য রাখি কি করে ! যতবার আমার সন্তানেরা তেলাপোকা আবিষ্কার করত ততবারই আমি ওদের সামনে হিরো হতাম। তেলাপোকা নেই এমন কোন বাসা কি আছে ? থাকতে পারে কিন্ত আমি পাইনি। তবে নতুন বাসাতে আগের বাসার মত না পেলেও একটা দুটো যে আছে তা বুঝতে আমার দেরি হয় নি। তাই হিরো হওয়ার সুযোগ এই বাসাতেও আছে। আরে শুরু করলাম দুটো জিনিস মিস করব। এখন শেষে গিয়ে দেখা গেল কয় কিছু মিস করে বসে আছি। বাঙ্গালী বলে কথা ! গত কয়েক বছরের এক ট্রেন্ড চলে আসছে কিনা। যেকোন দোষ নিজ ঘাড়ে বইতে পারছ না ? আস্তে করে বাঙ্গালীর উপর চাপিয়ে দাও। দেখি ,আমার পাঠকেরা এই চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টা মেনে নেয় কিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *