এক গাছের বিনিময়ে দশ গাছ। যে কথা বলে নাগরিকদের বোকা বানানো হয়।
নগর উন্নয়নের নাম দিয়ে যে গণহারে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে সেই উন্নয়ন আদৌ নাগরিকেরা চায় কিনা এ ব্যাপারে কি কোন সমীক্ষা হয়েছে। নাকি এটাও অন্যান্য উন্নয়নের মতই রাজধানীকে ঢেলে সাজানোর নাম দিয়ে ইট সিমেন্টের উত্তপ্ত ছায়ার উন্নয়ন। এরকম প্রতি উন্নয়ন কাজে যখন গাছ কাটা হয় তখন দেশের বনবিভাগের গাছ কাটা সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে সে আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মানুষের অগোচরে রাতের বেলায় গাছ কেটে ফেলা হয়। কিন্ত কোন কতৃপক্ষ এ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখায় না। অন্তত নিজেদের তৈরি সিস্টেম কে তো সম্মান করতে হবে।
আর এই গাছ কেটে যখন ধরা খায় তখন মুখস্ত বুলি আওড়ানো হয় একটা গাছ কেটে দশটা গাছ লাগানো হবে। আমি বলি , দশটা গাছ আপনি কোথায় লাগাবেন ? যে জায়গার অভাবে আপনার কথিত উন্নয়ণ কাজের জন্য গাছ কেটে ফেলতে হচ্ছে সেখানে আপনি দশটা গাছ কোথায় লাগাবেন । নাকি সংখ্যা মিলানোর জন্য ত্রিশ বছরেরও বেশি বয়স এরকম একটি গাছ কাটার বদলে ঢাকার উত্তর এবং দক্ষিনের সিটি কর্পোরেশনের অফিসের সামনে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য পাঁচটি পাঁচটি করে ঘাসের দানা পুঁতে দেওয়া হবে। সংখ্যাতে তো সমান থাকল ।
আর একটি গাছ সত্তর বা আশির দশকে দশকে যে পুষ্টি নিয়ে বড় হতে পেরেছে সেই একই পরিমাণ নিউট্রেশন এখন আর মাটিতে নেই যে কারণে একটি গাছ লাগালেই সে সত্তর বা আশির দশকে একটি গাছের যে হারে বৃদ্ধি হয়েছে সেই হারে একই স্থানে কোন গাছের চারার বড় হওয়া সম্ভব নয়। কেননা, মাটির পুষ্টি সারা বাংলাদেশেই আশংকাজনকহারে কমে গিয়েছে। বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস আসলে প্রতি বছরই এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। তাই একটি গাছ কেটে দশটি গাছ লাগাবো এগুলো ধূর্ততা। ধরে নিলাম দশটা গাছই লাগানো হল। এই দশটা গাছ বড় হতে হতে আবার নতুন কোন উন্নয়ন হত্যাযজ্ঞ এ গাছগুলোর ঘাড়ে এসে পড়বে না সেই গ্যারান্টি কে দিবে? একটা মেয়রের মেয়াদ কতদিন ? পাঁচ বছর।
আমরা আরো ধরে নিলাম একজন মেয়র তার লাগানো দশটি গাছ বড় করার ব্যাপারে পুরোই বদ্ধ পরিকর। এখন এই মেয়রের যদি বদল হয় তাহলে আরেক নতুন মেয়র যখন আসবে তখন আবার নতুন পরিকল্পনা চলে আসতে পারে গাছ নিয়ে। অর্থাৎ একজন মেয়র যদি চায় যে সে মেয়র থাকা অবস্থাতেই গাছ কে বড় রেখে যাবে তাহলে তার কম করে হলেও ছয়বার নির্বাচিত হয়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে আসতে হবে। যা এক রকম অসম্ভব। আর ঢাকার বাতাসে যে হারে বায়ু দূষন বেড়েছে সেই বায়ু দূষনের কারণে পরিণত উদ্ভিদেরই টিকে থাকতে সমস্যা হচ্ছে সেখানে মেয়রের লাগানো দশটি গাছ কিভাবে টিকে থাকবে। এ সব যুক্তিহীন কথাবার্তা ত্যাগ করা উচিত। নাগরিক উন্নয়ন বলতে যদি শুধুমাত্র ইট কাঠের উন্নয়নকেই বুঝানো হয় তাহলে নাগরিকদের উচিত হবে সেই উন্নয়নের সমালোচনা করা। আমরা এরকম উন্নয়ন চাই না। যদি এরকম গাছ কেটে উন্নয়নের এই কথিত প্রথা থামানো না হয় তাহলে এক সময়ে এই নাগরিক উন্নয়নের নাম দিয়েই গাছের ছায়া যে মানুষকে ঠান্ডা করতে পারে তাই বেমালুম ভুলে যাওয়া হবে। মানুষকে ঠান্ডা করার জন্য রাস্তার দ্বারে দ্বারে এসি বেষ্টিত ছোট ছোট কটেজ বানানোর প্রস্তাবনা আসবে। অর্থাৎ এই নাগরিক উন্নয়নের কোন শেষ নেই। তাই এটাইপের উন্নয়ন কে আসুন না বলতে শিখি।