‘ডিঙ্গো’ নিয়ে আবারো বিতর্ক

‘ডিঙ্গো’ নিয়ে আবারো বিতর্ক

Spread the love

অস্ট্রেলিয়ার বন্য কুকুর বা ওয়াইল্ড ডগ খ্যাত ডিঙ্গোনিয়ে বিতর্কের ঘোর যেন কাটছেই না। ডিঙ্গো দ্বারা বাচ্চা শিশু আহত হওয়া এটা নতুন কোন বিতর্ক নয়। কেননা এটা প্রতিষ্ঠিত যে ডিঙ্গো হল এক শিকারী প্রাণী। তার দ্বারা কোন শিশু বা মানুষ আহত হওয়া মোটেও অচিন্তনীয় নয়। কিন্ত ঘটনাটা দুঃখজনক। যদিও আমি ডিঙ্গোর ব্যাপারে এই বিষয়কে কোন বিতর্ক ভাবছি না।

CSIRO এর জার্নাল পেপার Australian mammalogy তে নতুন প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধ ‘The myth of Wild dogs in Australia: are there any out there’ এর দ্বারা নতুন বিতর্কের শুরু হয়। একটা সময় ভাবা হত এমনকি এখনো ভাবা হয় যে অস্ট্রেলিয়াতে পিউর ডিঙ্গো খুবই বিরল। অর্থাৎ যে ডিঙ্গোর মধ্যে কোন সংকরকরণ হয় নি এরকম পিউর ডিঙ্গো নেই বললেই চলে। এটা প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, দু একটা আইল্যান্ডের ডিঙ্গো ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ ডিঙ্গোই অস্ট্রেলিয়ার ফেরাল ডগ বা ঘর ছাড়া কুকুরদের সাথে ক্রস ব্রিডিং করে নতুন প্রজন্মের জন্ম দিয়েছে। পিউর ডিঙ্গো এখন বিরল কেস। কিন্ত সাম্প্রতিক প্রকাশিত নিবন্ধ এই বিশ্বাস কে এক চ্যালেঞ্জের সম্মখীন করে দিয়েছে।

এই প্রকাশিত নিবন্ধের গবেষকদের দাবি বরং উল্টো । তাদের মতে ডিঙ্গো এবং ঘরছাড়া কুকুরদের মধ্যকার প্রজননের ঘটনাই বরং বিরল ঘটনা। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন এলাকাতে ফেরাল ডগ বা ঘরছাড়া কুকুরের নাম করে যে কুকুরদের মারা হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই হল ডিঙ্গো। তারা অতিসত্ত্বর এই কুকুর হত্যা ( Culling) বন্ধের আহ্বান জানায়। এই নিবন্ধে উল্লেখ করা হয় যে তারা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে ক্যানিড স্পেসিস ( কুকুর, ডিঙ্গো ইত্যাদি প্রজাতির প্রাণী) এর ৫০৩৯ টি নমুনা সংগ্রহ করে এদের উপর মাইক্রোস্যাটেলাইট ডিএনএ টেস্ট করা হয়। এদের মধ্যে মাত্র ৩১ টি ফেরাল ডগ বা ঘরছাড়া কুকুর চিহ্নিত হয়। ডিঙ্গো এবং কুকুরের মধ্যকার হাইব্রিড হয়েছে এরকম প্রাণী চিহ্নিত হয় ১৭ টি। অর্থাৎ বেশিরভাগই পিউর বা খাঁটি ডিঙ্গো হিসেবে চিহ্নিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল , পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যবর্তী এলাকাতে ঘরছাড়া কুকুর নেই বললেই চলে। নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির গবেষক কাইলি কেয়ার্ন্স (Kylie M. Cairns) মনে করেন , “যদিও কিছু ডিঙ্গোর মাঝে গৃহপালিত কুকুরের কিছু অংশ আছে তারপরেও এই ডিঙ্গোরা তাদের জেনিটিক পরিচয় ফিরে পায়

এছাড়াও কাইলি এবং তার টিম দেখতে পান যে, ‘ওয়াইল্ড ডগেবা বন্য কুকুরেরনাম দিয়ে যে সমস্ত এলাকাতে কুকুর হত্যা করা হচ্ছে তাদের ভিতর অল্প পরিমাণ ডিঙ্গোর জীনগত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। আমরা যদি চাই ডিঙ্গো টিকে থাকুক তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই কালিং বা গণহারে প্রাণী হত্যা বন্ধ করতে হবে। আর এটা আরো কি ভালো উপায়ে করা যায় তা নিয়েও আমাদের চিন্তা করতে হবে।

সংক্রান্ত পূর্বের নিবন্ধ যেখানে গবেষকেরা দাবি করেছিলেন যে , ডিঙ্গো এবং কুকুরের মধ্যকার প্রজননের কারণে আসল ডিঙ্গো হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই নিবন্ধের বাস্তবতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলা হয়। তাদের সংগ্রহ করার নমুনার ফলাফল থেকে বের হয়ে আসে যে শতকরা ৬৪ পার্সেন্ট খাঁটি ডিঙ্গো এখনো অস্ট্রেলিয়ার ভূমিতে বিদ্যমান।

ডক্টর কেয়ার্ন্স বলেন, “ গত ২০০ বছরে নিঃসন্দেহে ডিঙ্গো এবং কুকুরের মধ্যে প্রজনন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্ত বনে থাকা বেশিরভাগ প্রাণীই ডিঙ্গো। এমনকি নিউ সাউথ ওয়েলসের ডিঙ্গোরাও তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখেছে। তারা তাদের জীনগত বৈশিষ্ট্য পুনরায় ফিরে পাচ্ছে।গবেষনা পেপারে উল্লেখিত করা হয় যে নিউ সাউথ ওয়েলস এর ২৪ পার্সেন্ট ক্যানিড স্পেসিস হল খাটি ডিঙ্গো।

গবেষকদের মতে বন্য কুকুর ব্যাপকহারে হত্যা করার দ্বারা ফেরাল ডগবা ঘর ছাড়া কুকুর সংক্রান্ত মিথ প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। তাদের মতে ঘর ছাড়া কুকুরের সংখ্যা অতটা বেশি নয় যতটা ধারণা করা হয়। যেখানে তাদের পাঁচ হাজারের অধিক নমুনা থেকে বের হয়েছে মাত্র ৩১ টি । ওয়াইল্ড ডগের নাম দিয়ে ক্যানিড হত্যা করা হলে পিউর ডিঙ্গোর অস্তিত্ব আরো হুমকির সম্মখীন হবে। সেক্ষেত্রে দেখা যাবে স্ত্রী ডিঙ্গো পুরুষ কুকুরের সাথে ব্রিড ঘটাবে। গবেষণাপত্রে আরো দেখানো হয় যে সমস্ত এলাকাতে বন্য ক্যানিডে হত্যা করার পরিমাণ কম সে সব এলাকাতে খাঁটি ডিঙ্গোর পরিমাণ বেশি। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ( ৯৭ পার্সেন্ট) , সাউথ অস্ট্রেলিয়া ( ৯১ পার্সেন্ট) , এবং উত্তরাঞ্চল ( ৯৮ পার্সেন্ট)

ডক্টর কেয়ার্ন্স বলেন, “ ডিঙ্গো হল অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব শিকারী প্রাণী। বাস্তুতন্ত্রে যার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। জাতীয় পার্কগুলোতে ডিঙ্গো হত্যা বন্ধ করা উচিত। এছাড়া ডিঙ্গোর প্রজনন ঋতুতে কোন গণ হারে হত্যা করার ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত। যে সমস্ত এলাকাতে গবাদিপশু হত্যার ঘটনা ঘটে শুধুমাত্র ঐ সমস্ত নির্দিষ্ট এলাকাতেই বন্য কুকুর হত্যা করার বিষয়টি সীমিত রাখা উচিত।

কিন্ত এ সংক্রান্ত পূর্বের গবেষণাপত্র যেখানে খাঁটি ডিঙ্গোর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল সেই গবেষণাপত্রের নেতৃত্বদানকারী পিটার ফ্লেমিং ( Peter Fleming) নতুন গবেষণাপত্র নিয়ে ভিন্ন মন্তব্য পোষণ করেন। তিনি বলেন , “তাদের পূর্বের গবেষণাপত্রের ডেটার সাথে নতুন গবেষণার ডেটার অনেক মিল রয়েছে। এবং আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে ডিঙ্গোর হাইব্রিড হওয়ার বিষয়টি অনেক বিস্তৃত। মূল তর্ক হল, ডক্টর কেয়ার্ন্স এবং তার সহকারীরা মূল টার্মের সংজ্ঞার ব্যাপারে পরিবর্তন এনেছেন। বিষয়টা অনেকটা কাকতাড়ুয়া যুক্তি‘-র মত। প্রথমে তারা ফেরাল ডগ বা ঘরছাড়া কুকুরের নতুন সংজ্ঞায়ন দান করল তারপরে তারা খাঁটি ডিঙ্গোকেও নতুন ভাবে সংজ্ঞায়িত করল তারপর তারা ঠিক সেভাবেই ব্যাখ্যা দান করল। বিষয়টা অনেকটা এরকম তারা বন্য কুকুরের মিথ মিটাতে গিয়ে নিজেরাই ডিঙ্গো নিয়ে নিজস্ব মিথ প্রতিষ্ঠা করল

ডক্টর ফ্লেমিং এর মতে ইয়রোপিয়ানরা আসার পূর্বে বর্তমানের তুলনায় ডিঙ্গোর পরিমাণ আরো অনেক বেশি ছিল। আর তখন মানুষের জীবন যাপন কে গোছানোর জন্য , গবাদি পশুর নিরাপত্তা এবং বন্যপ্রাণী টিকিয়ে রাখার জন্য এদের গণহারে হত্যা করা জরুরী ছিল । গণহারে হত্যা করার কার্যক্রম শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রাণীদের টার্গেট করেই করা হচ্ছে বিপন্ন ডিঙ্গোদের টার্গেট করে নয়। গণহারে হত্যা প্রকল্প ডিঙ্গোর খাটি হওয়া কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে এরকম কোন ডেটা নেই। বরং কেয়ার্ন্স এর নির্দিষ্ট এলাকাতে উন্মুক্ত ঘুরাফেরা করা কুকুরদের কমানোর ব্যাপারটা আমার নিকট পরস্পর বিপরীতমুখী মনে হয়েছে কেননা এদেরকে হত্যা করার দ্বারা আধুনিক কুকুরদের ( modern dog) জীন ডিঙ্গোদের মধ্যে ছড়ানোর আশঙ্কা কমিয়ে আনা যায়

ডক্টর ফ্লেমিং আরো মনে করেন নতুন পেপারে কেয়ার্ন্স এবং তার সহকারীরা ডিঙ্গোর ব্যাপারে দেশী বিদেশী শ্রেণীবিন্যাসবিদদের (taxonomist) সিদ্ধান্ত কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন । শ্রেনীবিন্যাসবিদদের মতে সব কুকুর এমনকি ডিঙ্গোও Canis familiaris .

কিন্ত কিছু বিজ্ঞানী যেমন, কেয়ার্ন্সসহ আরো অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন ডিঙ্গো অসংখ্য কারণে ঘরের কুকুর থেকে ভিন্ন। এজন্য তারা একে এক প্রজাতির মধ্যে রাখতে নারাজ । তাই তারা একে কুকুরের উপপ্রজাতি (subspecies) হিসেবে চিহ্নিত করাকেই যুক্তিযুক্ত মনে করে।

যদিও কুকুর এবং ডিঙ্গোর মধ্যে অনেক মিল আছে তথাপি ডিঙ্গোর মধ্যে এরকম অনেক বৈশিষ্ট্য আছে যা ডিঙ্গোকে বন্য পরিবেশে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। এরকমই মনে করেন সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (  Central Queensland University ) ব্রাডলি স্মিথ (  Bradley Smith ) যার গবেষণার বিষয় হল কুকুর সম্বন্ধীয় প্রাণীদের (canines) আবেগ এবং আচরণ (cognition and behaviour)। ডক্টর ব্রাডলি স্মিথের আরেকটি পরিচয় হল তিনি অস্ট্রেলিয়ান ডিঙ্গো ফাউন্ডেশনের (Australian Dingo Foundation) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (Scientific director) .

ডক্টর স্মিথ বলেন, “মূল পার্থক্য হল তাদের মধ্যকার স্বাধীনভাব। আপনি একটি কুকুরকে সিম্পসন মরুভূমিতে (simpson desert) ছেড়ে দিয়ে আসতে পারবেন না। কিন্ত ডিঙ্গো অস্ট্রেলিয়ার যেকোন জায়গাতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে । তারা মানুষের কোনরকম সাহায্য ছাড়াই প্রজনন কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। তাদের এই স্বাধীনভাবের কারণে ডিঙ্গো যেকোন সমস্যা সমাধানে অনেক অভিজ্ঞ অনেকটা প্রশিক্ষিত কুকুরের মত

ডক্টর স্মিথ আরো বলেন, ডিঙ্গোর শরীরই যেন বানানো বন্য পরিবেশের জন্য উপযুক্ত করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এর মস্তিষ্কের আকার বড় এবং এর শক্ত মাড়ি রয়েছে আর এর মাথা তার শরীরের সবথেকে চওড়া অঙ্গ। তো, যেকোন জায়গাতে তার মাথা যাওয়া মানে তার দেহও সেখানে যেতে পারবে। ডিঙ্গোর সরু বুক এবং অন্যান্য অঙ্গ ডিঙ্গোকে কার্যকরি নড়াচড়া করতে সহায়তা করে। এটা তার পা ফেলানো দেখলেও বুঝা যায়

ডক্টর স্মিথ আরো যোগ করেন , “ডিঙ্গোর অঙ্গের জোড়াসমূহ খুবই নমনীয়। যে কারণে তারা ডানে বামে খুব সহজেই মাথা ঘুরাতে পারে। এমনকি তারা মাথে উপরে রেখে সোজা উপরে এবং পিছনে উভয় দিকেই তাকাতে পারে। তাদের কনুই , কব্জি, নিতম্ব ( back hips) এর সবই অনেক নমনীয় যা তাদেরকে ওমব্যাটের গর্তে আশ্রয় নিতে সহায়তা করে। ডিঙ্গোকে যদি পিছনের দুই পা দিয়ে দাড় করানো হয় তাহলে সে তার বাহু দুটো খুব সহজেই প্রশস্ত করে দেখাতে পারবে। আর তারা যদি দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে খুব সহজেই তাদের পিছনের পা দুটো ধরে সোজা করে ফেলা যায় অনেকটা লেজের মত। যেন কেউ হাত দিয়ে লেজ সোজা করে দিচ্ছে অনেকটা এরকম

ডক্টর স্মিথের মত বিজ্ঞানীরা ডিঙ্গোর এই নমনীয়তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন যে ডিঙ্গো কি করে এই নমনীয়তা পেল। ডিঙ্গোর নমনীয়তা ডিঙ্গোকে শিকারের পিছনে ধাওয়া করতে এবং শিকার কে ধরার জন্য গর্তে প্রবেশ করতেও সহায়তা করে।

ডক্টর স্মিথ বলেন, “ এমনকি ডিঙ্গো তার কানকেও স্বাধীনভাবে নাড়াতে পারে। এবং মুখ পিছনের দিকে ঘুরাতে পারে

ডিঙ্গো এবং কুকুরের মাঝে আরো বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে তাদের প্রজনন প্যাটার্ন, নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক আচরণ, এবং তাদের সামাজিক কাঠামো এর সব কিছুর মধ্যেই পার্থক্য রয়েছে। এমনকি ডিঙ্গো কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ (bark)করার থেকে নেকড়ের মত চিৎকার (howl) করার ব্যাপারেই বেশি পারদর্শি। এই সব বৈশিষ্ট্যই ডিঙ্গোকে বন্য পরিবেশে থাকার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে।

ডক্টর স্মিথ মনে করেন , ডক্টর কেয়ার্ন্স এর টিমের রিপোর্টে এটা প্রকাশ পায় যে ডিঙ্গোর জিন ডমিনেটেড জিন। অর্থাৎ কুকুরের সাথে মিশ্রিত হওয়ার পরে ডিঙ্গোর জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলো হারিয়ে যায় না। তা শক্তিশালী হিসেবে প্রকাশ হয়। এদের মাঝে ডিঙ্গোর বৈশিষ্ট্য প্রকট বলেই তারা বন্য পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। যদি তা না হত তাহলে তাদের পক্ষে বন্য পরিবেশে টিকে থাকা সম্ভব হত না।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ( University of Sydney ) স্থল বাস্তুবিদ ( Terrestrial ecologist ) ক্রিস ডিকম্যান (Chris Dickman) ডক্টর স্মিথের সাথে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, “কোন প্রাণী যা ডিঙ্গোর মত দেখতে নয় কিন্ত ডিঙ্গোর মত আচরণ করে যদি সে কুকুরের জীনও পেয়ে থাকে তাহলে সেই প্রাণী টিকে থাকতে পারবে না। ক্রিস ডিকম্যান অস্ট্রেলিয়ান জুলোজিস্টের স্পেশাল ইস্যু ডিঙ্গো ডিলেমা‘- ইস্যুর সম্পাদক ছিলেন। তিনি আরো বলেন, “এ বিষয়টি ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যে সাধারণ কুকুর এবং ডিঙ্গোর মধ্যকার প্রজনন নতুন প্রাণীর উপর কম প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ ডিঙ্গোর বিশুদ্ধতার উপর তা খুব কম প্রভাব ফেলে। ডিঙ্গো এবং কুকুর কে কি একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত ধরা হবে এই প্রশ্নের জবাবে ডিকম্যান বলেন, আসলে এ বিষয়টার পিছনে অনেক আইডিয়া কাজ করে। আপনি একটি প্রজাতির কিভাবে সংজ্ঞায়ন করবেন সেটাও এখানে বিবেচ্য বিষয়। জীববিজ্ঞানে প্রজাতির সংজ্ঞায়ন‘ (Biological species concept) অনুযায়ী যদি কোন প্রাণী নিজেদের মধ্যে ব্রিড করতে পারে বা প্রজনন ঘটাতে সক্ষম হয় তাহলে তাদেরকে একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সে হিসেবে কুকুর এবং ডিঙ্গোকে একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কিন্ত এই সংজ্ঞায়ন আবার নেকড়ের বেলায় কার্যকর নয়। যদিও নেকড়ে কুকুরের সাথে প্রজনন ঘটাতে সক্ষম। নেকড়ের স্বতন্ত্রতার ব্যাপারে কেউ প্রশ্নও তুলেনি।

কিন্ত নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of New South Wales ) ফসিল বিশেষজ্ঞ ( palaeontologist ) মাইক আর্চার (Mike Archer) সেই প্রশ্নও তুলেছেন। তার মতে নেকড়ে, কুকুর এবং ডিঙ্গো সবাই একই প্রজাতির প্রাণী। আর্চারের মতে ডিঙ্গো শুধুমাত্র কুকুরের এক পুরাতন সংস্করণ ( ancient breed)। তিনি বলেন, “এটা ঠিক আছে ডিঙ্গো অস্ট্রেলিয়ার বন্য পরিবেশে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রেখেছে। কিন্ত এর কারণ হল, হাজার বছর ধরে তারা এ পরিবেশে আছে। যে কারণে ঘরের কুকুর এবং তাদের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য তৈরি হয়েছে। কিন্ত তারমানে এই নয় যে তারা ভিন্ন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি এরকমই হয় তাহলে তো কুকুরের প্রত্যেকটা ব্রিড চিহুয়া থেকে গ্রেট ডেন (chihuahuas to great danes) প্রত্যেকটাকে একটা করে আলাদা প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। আর এটা বোকার মত কাজ ছাড়া আর কিছু না

ডক্টর স্মিথ আর্চারের বিপরীতে এ ব্যাপারে বলেন যে, “মানুষের হস্তক্ষেপের কারণে গৃহপালিত কুকুরের মধ্যে যে সমস্ত ব্রিডিং এর ঘটনা ঘটেছে তা অনেক কৃত্তিমতাযুক্ত। এ জিনিসের সাথে ডিঙ্গোর তুলনা করাটা ভুল। কিন্ত প্রোফেসর আর্চার ওয়াইল্ড ক্যানিড ( ডিঙ্গো বা কুকুরদের) গণহারে হত্যা করার ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেছেন । তিনি বলেন, “এ বিষয়টা আমাকে গভীরভাবে দুঃখিত করে। বাস্তবতা হল অস্ট্রেলিয়ার জন্য ডিঙ্গো কে খুব প্রয়োজন। কারণ অস্ট্রেলিয়াতে এরা একমাত্র আধিপত্য সৃষ্টিকারী শিকারী প্রাণী। তাদেরকে সড়িয়ে ফেলার ব্যাপারে যে সমস্ত তর্ক হয় তা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু না। তিনি আরো বলেন, ‘ ডিঙ্গোর পাকস্থলি গবেষণা করে দেখা যায় ডিঙ্গো খরগোশ, ঘরছাড়া বিড়াল ( ফেরাল ক্যাট) , তারপর ক্যাঙ্গারুর সংখ্যা নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে রাখার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখে। ডিঙ্গোতে কিছু কুকুরের জিন থাকলেও কিছু আসে যায় না। আমাদের ডিঙ্গো দরকার অস্ট্রেলিয়ার ডিঙ্গো দরকারi

ডক্টর কেয়ার্ন্স বলেন , “আমরা যখন ওয়াইল্ড ডগশব্দটি বলি তখন তার দ্বারা কেবল ডিঙ্গোই উদ্দেশ্য নেই। আমাদের এটা মনে রাখা দরকার যে কালো নেকড়েদের এখনো নেকড়ে হিসেবেই সাব্যস্ত করা হয় যদিও তারা নেকড়ে এবং কুকুরের হাইব্রিড।  ডক্টর কেয়ার্ন্স এর মতে ডিঙ্গো বা বন্য কুকুরের দ্বারা গবাদি পশুর ক্ষতির পরিমাণ খুবই কম। ডক্টর কেয়ার্ন্স এবং তার টিম গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডিঙ্গোর লোমের বর্ণের প্রকারভেদ নিয়ে এক পেপার প্রকাশ করেন। সেখানে তার টিম উল্লেখ করেন যে, ডিঙ্গোর ব্যাপারে বেশিরভাগ মানুষের ধারণা অনেকটাই একেবারে নির্দিষ্ট করা। তারা মনে করেন যে ডিঙ্গো শুধুমাত্র হালকা হলুদ ( ginger coats ) বর্ণের হওয়া সম্ভব। কিন্ত তারা প্রমাণ করেন যে ডিঙ্গো বিভিন্ন বর্ণের হতে পারে। হালকা হলুদ বর্ণের ডিঙ্গো মাত্র তেপ্পান্ন পার্সেন্ট। এগারো পার্সেন্ট কাল এবং তামাটে বর্ণের। চৌদ্দ পার্সেন্ট হল কালো এবং বাদামি বর্ণের এবং এক পার্সেন্ট সাদাi। অর্থাৎ কেউ ডিঙ্গো কে বাচানোর জন্য শুধুমাত্র বর্ণ দেখে বন্য কুকুর হত্যা করে তাহলেও ডিঙ্গো হত্যা করার সমূহ সম্ভাবনা আছে। কেননা ডিঙ্গোর শারীরিক বর্ণের প্রকারভেদ অন্যান্য ক্যানিড প্রজাতির মতনই।

যদি আমরা বিষয়টা স্বাভাবিকভাবেও দেখি তারপরেও ডিঙ্গোর প্রয়োজন বুঝে উঠাটা স্বাভাবিক। ইউরোপিয়ান সেটলাররা তাসমানিয়ান টাইগার গণহারে হত্যা করে শুধুমাত্র তাদের গবাদিপশুদের বাচানোর জন্য। কিন্ত বর্তমান বাস্তবতা আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সেটা কতই না বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এখন যদি বন্য কুকুর হত্যার নাম দিয়ে ডিঙ্গোদেরও হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হয় তাহলে হয়তবা এই প্রাণীটিও একদিন হারিয়ে যাবে। কেয়ার্ন্স এবং তার টিমকে সাধুবাদ তাদের রিসার্চের জন্য।

তথ্যের উৎসঃ  

ihttps://www.abc.net.au/news/science/2021-03-26/most-wild-dogs-are-dingoes-say-researchers/100014928

ii  https://www.smh.com.au/environment/conservation/colour-little-help-in-telling-a-dingo-from-a-wild-dog-research-shows-20210215-p572op.html

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.