‘ওয়াইল্ড কর্ণাটক’ ডকুমেন্টারি রিভিউ

‘ওয়াইল্ড কর্ণাটক’ ডকুমেন্টারি রিভিউ

Spread the love

ভারতের ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফারদের দিয়ে ব্লু চিপড প্রথম কোন ডকুমেন্টারি হল ওয়াইল্ড কর্ণাটাক। এর আগেও ইন্ডিয়ার ওয়াইল্ড লাইফ নিয়ে কিছু ডকুমেন্টারি বানানো হয়েছে। যেমনঃ Natgeo এর secrets of Wild india, BBC এর Hidden India, India natures wonderland, India land of the tiger, Animal Planet এর Wildest India এই ডকুমেন্টারি সমূহ ইন্ডিয়ার ওয়াইল্ড লাইফ নিয়ে বানানো হয়। কিন্ত এর একটাও ভারতের অর্থায়নে বা ভারতের স্পন্সরসিপে হয় নাই। কিন্ত Wild Karnataka হল ভারতের ইতিহাসে প্রথম কোন হাই রেজুলেশনের ওয়াইল্ড লাইফ ডকুমেন্টারি যার অর্থায়ন সরাসরি করে কর্ণাটক বন বিভাগ। এবং তারা কর্ণাটকের ওয়াইল্ড লাইফ এবং বায়োডায়ভার্সাটি বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে নি। তারা এর ন্যারেটর হিসেবে ওয়াইল্ড লাইফ ডকুমেন্টারি এর বর্তমান সময়ের সেরা ন্যারেটর David attenborough কে ব্যবহার করে। অর্থাৎ কোন সাইড দিয়েই তারা কার্পণ্য করে নি। চার বছর ধরে প্রায় চারশ ঘন্টা ভিডিও রেকর্ড করা হয় যা থেকে সেরা তেপ্পান্ন মিনিটের একটা ডকুমেন্টারি সাজানো হয়। এখন আলোচনা করব ডকুমেন্টারিতে নতুন কি ছিল। উল্লেখ্য এই ডকুমেন্টারির ট্রেইলার রিলিজ হয় গত বছর ২০১৯ এর মার্চের প্রথম দিকে আর ডকুমেন্টারি তারা রিলিজ করে ২০২০ এর জানুয়ারিতে। আর দুই ফেব্রুয়ারি কর্ণাটক ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট তাদের ফেইসবুক পেইজে ডকুমেন্টারিটা পুরো দেখার জন্য একটা লিঙ্ক শেয়ার করে।

কর্ণাটকের পরিচয়ঃ কর্ণাটক হল ভারতের দক্ষিণের সবচেয়ে বড় প্রদেশ। এ প্রদেশের ৩৮,৭২০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে আছে বিশাল বন। যে বনের পরতে পরতে ডায়ভার্সাটি। ভারত অনেক আগে এই বনকে Sanctuary ঘোষণা করে। অর্থাৎ প্রাণী ধরা, মারা সবকিছু নিষেধ।

ডকুমেন্টারি শুরু হয় লিজেন্ডারি বেঙ্গল টাইগার আর হরিণের দৃশ্য দিয়ে। বেঙ্গল টাইগার সবথেকে বেশি এই কর্ণাটকের বনে 1। আমি শুধুমাত্র শুরুটুকু বললাম এরপর থেকে ইউনিক বিষয়গুলোর আলোচনাই করব যা সাধারণত অন্যকোন ওয়াইল্ড ডকুমেন্টারি তে দেখানো হয় নাই।

ছেলে ময়ূরের প্রণয়ের চেষ্টাঃ ছেলে ময়ূর যখন তার পাখনাগুলো মিলে ধরে তখন আমি আপনি পাগল হয়ে গেলেও মেয়ে ময়ূর পাগল নাও হতে পারে। অনেক সময় এই পেখম মেলা ফেইলড মিশনে গিয়ে ঠেকতে পারে।

Jungle cat বা বনবিড়ালের বাচ্চার কোবরার মুখোমুখি হওয়াঃ

বন বিড়ালের মত সাধারণ (!) একটা প্রাণীর জন্য বেশ কিছু সময় খরচ করা হয় শুধুমাত্র এটা বুঝানোর জন্যই যে বন বিড়াল সাধারণ কোন প্রাণী নয়। বন বিড়ালের একটা বাচ্চা Specatled Cobra এর মুখোমুখি হয়। এবং দুজনই দুজনের শক্তি দেখিয়ে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে বিদায় নেয়। এটা আসলেই ইউনিক।

 

কিং কোবরাঃ দ্যা আল্টিমেট কিং কোবরা এর পিছনেও বেশ কিছু মিনিট খরচ করা হয়। যে বিষয়টা নতুন দেখলাম তা হল কিং কোবরার ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়া।

হর্নবিল পাখির Strychno (স্ট্রিকনো) গাছের বিষাক্ত ফল খাওয়াঃ এই গাছের ফল নিউরোটক্সিনে ভর্তি। কর্ণাটকের কোন পশু পাখি এই ফলের ধারে কাছেও এগোয় না। কিন্ত হর্নবিল পাখি এই গাছের ফলা গাফাগাফ গিলতে পারে। তার ডায়জেস্টে কোন রকম সমস্যা হয় না।

মেইল ড্রাকো লিজার্ডের ফিমেইল ড্রাকো লিজার্ডের কাছে উড়ে যাওয়াঃ ওয়েল, এর আগে প্লানেট আর্থ টু তে বর্নিও এর জঙ্গলে এরকম ড্রাকো লিজার্ডের উড়ে যাওয়া দেখেছিলাম কিন্ত সেটার বিহাইন্ডে কোন রোমান্স ছিল না। কিন্ত কর্ণাটকের এই ডকুমেন্টারির ড্রাকো লিজার্ডের গ্লাইডিং এর পিছনে ব্যর্থ প্রেমঘটিত কারণ ছিল। সেটা কি ছিল তা জানতে হলে ডকুমেন্টারিটা দেখতে হবে।

ঢোল ওয়াইল্ড ডগের সাম্বা হরিণের দাবড়ানি খাওয়াঃ

ঢোল জঙ্গলি কুকুরের গ্যাং সাম্বা হরিণের বাচ্চাকে ডিস্টার্ব করতে গেলে বাচ্চার মা পুরো গ্যাং কে দাবড়ানি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।

ভোদড় যখন বাঘকে তাড়িয়ে দেয়ঃ স্মুথ কোটেড ওটর সাইজে অত বড় নয়। কিন্ত আজকে দেখে বুঝলাম যে এরাও কম যায় না। এদের জাত বড় ভাই অ্যামাজনের জায়ান্ট ওটর পানির কাছে জাগুয়ার কে দেখলেই পুরো গ্যাং নিয়ে এসে তাড়িয়ে দেয়। এখানেও দেখলাম বেঙ্গল টাইগার পানিতে গা ভিজিয়ে শরীর ঠান্ডা করতে আসলে এই ছোট ভোদড়ের গ্যাং বাঘ মামা কে তাড়িয়ে দেয়। আরে কি দৌড়ানি!

 

লেওপার্ড বাঘের বানর কে ধাওয়া দেওয়াঃ লেওপার্ড বানর শিকারের জন্য ধাওয়া দিয়ে গাছে উঠে যায়। অতঃপর তার গাছে ঝুলে থাকতে হয়। একটা কথা বপ্লে নেওয়া ভাল, কয়েক বছর আগে বানরের একটা বাদড়ামির ছবি ভাইরাল হয়েছিল সেখানে দেখা যায় একটা বাঘ বেঙ্গল টাইগার কে ইচ্ছেমত বিরক্ত করছিল। কিন্ত এটা বেঙ্গল টাইগারের ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও লেওপার্ডের ক্ষেত্রে কিন্ত সম্ভব নয়।

অপূর্ণতা যা পেলামঃ কর্ণাটকের মত একটা ভাস্ট ল্যান্ড কে তেপ্পান্ন মিনিটের সিঙ্গেল ডকুমেন্টারিতে তুলে ধরা অনেকটা অসম্ভব বৈকি। এটা আরো সময় নিয়ে কয়েক পর্বে করলে ভাল হত। Fauna ( native wildlife) এর পাশাপাশি Flora নিয়েও আলোচনা আসা উচিত ছিল। কেননা দুটো জিনিসই একটা আরেকটার সাথে সম্বন্ধযুক্ত। কর্ণাটকের কোরাল ওয়ার্ল্ড নিয়ে অল্পই আলোচনা হয়েছে আলোচনা আরো দীর্ঘ হতে পারত। গ্রে উলফের উপর খুব অল্প সময় খরচ করা হয়েছে। মাত্র কয়েক সেকেন্ড। হাতির পিছনে অল্প সময় খরচ করে নেকড়ের পিছনে একটু সময় বাড়ানো যেত। উলফ হল লিজেন্ডারি প্যাকড প্রিডেটর।

সমাপ্তিঃ আজকালকার ডকুমেন্টারিগুলোতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের উপর আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যা আমরা বিবিসি আর নেটফ্লিক্সের ডকুমেন্টারিগুলোতে দেখেছি। বড় বড় ফিল্ম মিউজিশিয়ানদের আনা হয়। এই ডকুমেন্টারিতেও একই কাজ করা হয়। রিকি কেজ কে আনা হয়৷ কিন্ত আমার কাছে ন্যাচারের দৃশ্যের পিছনে ঢোল তবলার সাউন্ড বিরক্তিকর ঠেকে। ন্যাচারের নিজস্ব সৌন্দর্য আছে তা দেখা এবং শোনা দুটোতে পরিপূর্ণতা পায়। এখন এরকম সাউন্ড দেয়া যা আদৌ প্রকৃতির সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না তা নিঃসন্দেহে একটা অনর্থক বিষয়। এই ডকুমেন্টারিতে আরো বেশি করতে গিয়ে যা করেছে কিছুক্ষণ পর পরই ইন্ডিয়া ঘরানা টিকিয়ে রাখতে একটা মেয়ের কন্ঠে রাগ মেলোডি দেওয়া হয়। এটাই পুরোই আমার বিরক্তি ঠেকেছে। ন্যাচার ডকুমেন্টারির জন্য ফলিক সাউন্ডই যথেষ্ঠ।

.

এই ডকুমেন্টারি যারা দেখবে অন্তত ইন্ডিয়ার যারা দেখবে তারা বাস্তসংস্থানের কোন ক্ষতি করার আগে দ্বিতীয়বার ভেবে নিবে এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি। এরকম রিচ ডকুমেন্টারি বাংলাদেশের ওয়াইল্ড লাইফ নিয়ে বানানো হলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এ নিয়ে ভালোবাসা এবং সচেতনতার আরম্ভ হবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এরকম একটা কাজ হাজার হাজার কঠিন কাজ পথ কে মসৃণ করে দেয়।

 

 

1 ডকুমেন্টারিতে উল্লেখিত এ তথ্যটি ভুল ছিল। উত্তরাখন্ডে কর্ণাটকের থেকে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। https://www.newindianexpress.com/nation/2020/jul/28/corbett-reserve-has-highest-tiger-density-in-india-report-2175962.html

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.