ছেলেবেলার জীব বৈচিত্র্য বনাম এবেলার জীব বৈচিত্র্য – দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব

ছেলেবেলার জীব বৈচিত্র্য বনাম এবেলার জীব বৈচিত্র্য – দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব

Spread the love

প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান অবস্থাঃ

জীব বৈচিত্র্যের শুরুটা হয় একেবারে শুরু বা ছোট প্রাণী থেকে। তারাই মূল উৎপাদক। এক্ষেত্রে মূল হল পোকা মাকড়। তো, এবার পুরো বাড়িতে পোকা মাকড়ের সংখ্যা খুবই কম মনে হল। মাটির পোকা সাধারণত সিজনাল হয়ে থাকে কিন্ত কিছু পোকা কমবেশি সবসময়ই থাকে। কিছু টারমাইটের সন্ধান পেলাম। বিটলের সংখ্যা খুবই অল্প। এছাড়াও অন্যান্য ঘাস ফড়িং টাইপের পোকাও নেই। প্রজাপতি আর ফড়িং এর সংখ্যা হাত দিয়ে গোনা যায় এরকম। আর ফলজ গাছের সংখ্যাও কমে যাওয়াতে পাখির সংখ্যা কমে গিয়েছে। তাই এখন আর ঝাকে ঝাকে পাখি আসে না। আসে একটা দুটো করে। কিছু মাছরাঙ্গা পাখি বসে পুকুরের পাশে। আর অল্প কিছু ডাহুক আছে।

ব্যাঙ্ দেখলাম এক প্রকারই গর্বের সাথে টিকে আছে। কুনো ব্যাঙ ।বেশ পরিমাণ আছে। লিজার্ড বলতে আছে শুধুমাত্র কয়েক প্রকারের টিকটিকি। সাপের দেখা পেলাম না। গুই সাপ দেখেছি তা শুধুমাত্র এক প্রকার। বেজির দেখা পেয়েছি কিন্ত তা এখন তারা ভিজিটর হিসেবে যাওয়া আসা করে। ইঁদুর, চিকা এগুলো এখনো আছে। জলজ প্রাণীর মধ্যে শুধুমাত্র কই মাছের সন্ধানই এখন পাওয়া যায়।

জীব বৈচিত্র্য কমার কারণ কি ?

বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক যতগুলো কারণ প্রকৃতিবিদেরা চিহ্নিত করেছে আমাদের বাড়ির জীব বৈচিত্র্যও ঠিক একই কারণে কমছে। নিচে আমি এক এক করে কারণগুলো বর্ণনা করব।

হ্যাবিট্যাট লসঃ

আমাদের বাড়িতে লোক বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন ঘর উঠাতে হয় যে কারণে বাড়ির পিছনের বিরান জায়গাতে এখন এক ঘর দাঁড়িয়ে আছে। এই ঘর বানাতে স্বাভাবিক ভাবেই গাছ কাটার প্রয়োজন হয়। একটা বিশাল রেইন ট্রি গাছ কাটা হয় ঘরের দরজা জানালার জন্য। এই গাছের কুঠুরে বছরের পর বছর আমি টিয়ে পাখিকে বাসা করতে দেখেছি। দেখেছি গুই সাপের উঠানামা। এছাড়াও বাড়ির পিছনের যে খাল তা একমাত্র আমাদের বাড়ির পিছনের অংশটুকু তেই টিকে আছে। বাকি অংশগুলো যে যেভাবে পারে ভরাট করে ফেলেছে অর্থাৎ খালের কোন উৎস পানি নেই। এটা এখন নর্দমাতে পরিণত হয়েছে। সেই নর্দমাতে আবার ফেলা হয় প্লাস্টিকের বর্জ্য। পশ্চিম সাইডে দেয়াল তোলা হয়েছে । ওখানের খালি মাঠ যা বর্ষাকালে জলজ প্রাণীর জন্য ওয়েট ল্যান্ড হত । তা আর এখন পসিবল না।

ক্লাইমেট চেঞ্জঃ

বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তনের প্রভাব থেকে আমাদের বাড়ির জীব বৈচিত্র্য আলাদা নয়। ১৯৯৮ সালের বড় বন্যার পূর্বে ১৯৯৭, ১৯৯৬ এ সময়গুলোতে প্রতি বছর বন্যা হত। বন্যার কারণে ফলজ গাছ সমূহ মরে যায়। ১৯৯৮ সালের বন্যাতে এক ক্যাটাসট্রোফিতে পরিণত হয়। বাসার যত বড় বড় কাঠাল গাছ ছিল সব মরে খালি হয়ে যায়। এছাড়াও প্রতি বছর যে গাছ কে কেন্দ্র করে মৌমাছি বাসা বানাত এরকম বড় এক কৃষ্ণচূড়া গাছ মরে যায়। বন্যার ফলে জীব বৈচিত্র্যের মধ্যে নতুনত্ব আসে এটা সঠিক। কেননা নতুন পানিতে নতুন জলজ প্রাণী ভেসে আসে। নতুন মাটি আসে। এগুলো জীব বৈচিত্র্যে কে পরিপূর্ণতা দেয়। কিন্ত ঘন ঘন বন্যার কারণে তার স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে প্রচুর সময়ের প্রয়োজন হয়। প্রতি বছর বন্যার কারণে নতুন করে ফলজ গাছ লাগানো হলেও তা বাড়তে পারেনা। সর্বশেষ ২০০৭ সালে যে সিডর আঘাত হানে সে আঘাতে আমাদের বাসার ষাটের অধিক গাছ উপড়ে যায়। এদের মধ্যে বেশ কিছু ফল গাছ ছিল যা মূলত মানুষ লাগায় না কিন্ত এমনিতেই তা পশু পাখির কারণে তা হয় এবং গাছগুলোর ফল পশু পাখির খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। খইয়া বাবলা, দেশি গাব, ডুমুর এরকম কিছু উদ্ভিদ। সিডরের পরে এরকম বেশ কিছু গাছ উপড়ে পড়ে। এছাড়াও ছিল বেশ কিছু বরই গাছ । এখন বাসাতে পরিপক্ক বরই দিতে সক্ষম একটি গাছও নেই।

ইনভেসিভ স্পেসিসের চাপঃ

বাসাতে ঢুকতে যে মাঠ , সেই মাঠে এখন আর কোন ঘাস নেই। পুরো মাঠই দখল করে নিয়েছে পাকিস্তানি বা জার্মান লতাসহ বিভিন্ন আজে বাজে বিদেশি লতাপাতা। পুরো মাঠ তারা দখল করে রেখেছে দেখলে মনে হবে। এই লতার মধ্যে ঘাস হওয়া সম্ভব নয়। আর ঘাস না হলে অন্যান্য ঘাস নির্ভর লোকাল পোকা মাকড়ও আসবে না। আর এই পোকামাকড়ের উপর নির্ভরকারী পাখিরাও আসবে না। এছাড়াও স্বেচ্ছায় লাগানো বিদেশী গাছ যেমনঃ মেহগনি সহ আরো কিছু বিদেশী গাছ যার ফল মূলত পাখিরা ছুয়েও দেখে না তারা ঠিকই টিকে আছে আপন মহিমায়।

মনোকালচারঃ

সিডর ঘূর্ণিঝড়ের পরে আমাদের পুকুরের আশেপাশের গাছগুলো মনোকালচারে রূপ নেয়। কেননা বিভিন্ন ফলজ গাছ উপড়ে যায় এরপর শুধুমাত্র কিছু সুপাড়ি এবং নারিকেল গাছই টিকে থাকে। কিন্ত নারিকেল এবং সুপারি খাওয়ার মত কোন প্রাণী আমাদের ওখানে নেই। একসময় ছিল । কাঠবিড়ালির মত এক প্রাণী ছিল যাকে কডা নামে ডাকা হয় কিন্ত এখন আর তা নেই।

প্রাণীদের চলাচলের স্বাভাবিকতা নষ্ট করাঃ

পশ্চিম পাশে ওয়াল হওয়াতে আগে যে জীব জন্তু সহজেই আমাদের বাসার এরিয়াতে আসতে পারত সেই জীব জন্ত এখন আর সহজে আসতে পারবে না। খুব প্রয়োজন না হলে এরা ওয়াল ডিঙ্গিয়ে আমার বাসার এরিয়াতে প্রবেশ করবে না। এছাড়াও পুকুরের চাষ করা মাছ যেন ভেসে না যায় এজন্য নেট ব্যবহার করা হয়েছে । এই নেটের কারণে পুকুরের বড় অংশ জুড়ে যে সীমানা সেখান দিয়ে বড় গুই সাপ, বেজি ইত্যাদি টাইপের প্রাণীর প্রবেশ কমে যাবে।

খাদ্যের অভাবঃ

আমাদের জীব বৈচিত্র্যের অ্যাপেক্স প্রিডেটর হিসেবে যদি বেজি এবং গুই সাপ কে চিহ্নিত করি তাহলে বলতে হবে এদের খাবার আমাদের এরিয়াতে খুবই অল্প। বিশেষ করে বেজি। পূর্বের ওয়াইল্ড লাইফ এখন আরবান ওয়াইল্ড লাইফে রূপান্তরিত হওয়াতে এই প্রানীরা আমাদের দেওয়া খাদ্যের উপর নির্ভর হয়ে গিয়েছে। যে কারণে কোন বাসাতে হাস মুরগি পালন করা হলে বেজির চলাফেরাও সেখানে বেড়ে যায়। কিন্ত আমরা প্রায় এক যুগ ধরে কোন হাস মুরগি লালন পালন করি না। তাই স্বাভাবিকভাবেই বেজি তাদের আবাস পরিবর্তন করবে।

দূষণঃ

প্লাস্টিকের দূষণের কারণে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ব্যাপকহারে কোন নির্দিষ্ট জায়গা না বেছেই যে যেভাবে পারে সেভাবে প্লাস্টিক ফেলার কারণে সার্বিকভাবে আমাদের বাসার মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও রয়েছে যত্রতত্র ইট বালির খোয়া ফেলা। এগুলোর মধ্যে প্রকৃতির লাঙ্গল কেঁচোর পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়।

ফেরাল বা স্ট্রিট বিড়ালের ছড়াছড়িঃ

মাঝের কিছু বছরে বিশেষ করে ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমাদের বাসায় বিড়ালের সংখ্যা অত্যাধিক বেড়ে যায়। ছয় থেকে আট। আমাদের বাসার এরিয়া হিসেবে নিঃসন্দেহে এটা অতিরিক্ত। আমাদের বাসাতে সবসময়ই কোন না কোন ডমেস্টিক ক্যাট থাকত কিন্ত তা সর্বচ্চ হলে দুটো। কিন্ত সংখ্যা যখন আটে পৌছায় তখন তাকে অতিরিক্তই বলা যায়। এদের অনেকেই ঘরে থাকে না শুধুমাত্র খাবার এবং রাতের সময় ছাড়া। বাকি সময়টুকু বাড়ির এরিয়ার মধ্যে ঘুরাঘুরি করে। তখন এরা বিভিন্ন লিজার্ড এবং পাখি শিকার করে। আমি নিজে আমাদের বিড়াল কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাপ এবং লিজার্ড শিকার করতে দেখেছি। তাদের এরকম যত্রতত্র শিকার নিঃসন্দেহে বায়োডায়ভার্সাটিতে পরিবর্তন আনে।

আশপাশের জলা ভূমি নষ্ট হওয়াঃ

আমাদের পুকুরে বিভিন্ন প্রাণীর খাদ্য কমে গিয়েছে। যেমনঃ গুই সাপ কে আমি নিজে শিকার করে কাকড়া খেতে দেখেছি। সেই কাঁকড়া এখন আর পুকুরে নেই। এছাড়াও কাঁকড়া টাইপের প্রাণীরা যা খায় ছোট ছোট ক্রিল টাইপের ছোট ছোট চিংড়ী সে জিনিসও পুকুরে নেই। এগুলো তাদের খাবারের উৎস না পেয়ে আমাদের পুকুর হতে বিলুপ্ত হতে বাধ্য হয়। এখন প্রশ্ন হল এ জিনিস তো আমাদের পুকুরে আমরা কখনো ছাড়িনি তাহলে এগুলো আসত কোথা হতে ? এর জবাব হল বর্ষা মৌসুমে যখন পুকুর ডুবত তখন পুকুর খালের সাথে সম্পর্ক হয়ে যেত। সেই খাল আবার তার পাশের পুকুরের সাথে সম্পর্ক করত। সেই পুকুর আবার তার পাশের পুকুরের সাথে সম্পর্ক করত। এভাবে এক বিশাল জলাভূমি তৈরি হত। কিন্ত আশেপাশের সব পুকুর ভরাট করে ফেলার কারণে এখন আর সেই বড় জলাভূমি তৈরি হয় না যে কারণে আর আমাদের পুকুরে জীব বৈচিত্র্যের মাঝেও রিচ খাদ্যের উৎস প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া আগে বিভিন্ন সময় যে বন্যা গুলো হত সেই বন্যার আগমন নেই ২০০৬ সাল থেকে । বন্যা যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠিক সেরকম এটা প্রকৃতিকে নতুন করে সাজাবারও সুযোগ করে দেয়। নতুন মাটি পায়। যার সাথে অসংখ্য প্লাঙ্কটন চলে আসে। এবং ক্রিল টাইপের চিংড়ী , বিভিন্ন কচ্ছপ আর কাঁকড়া। তখন জীব বৈচিত্র্যে নতুন করে এক পরিপূর্ণতা পায়। এছাড়াও আমাদের পুকুরের পাশে লাগানো মেহগনি গাছ আর রেইন ট্রি গাছের পাতা পুকুর কে ভরাট করে ফেলে। এই পাতার কারণে মাটিতে প্লাঙ্কটন জন্মানো কঠিন হয়ে যায়। একটা প্রলেপ পড়ে থাকে। আর মেহগনি গাছের ফল খুবই তিক্ত। এই তিক্ত ফল পানিতে পড়লে আশপাশের প্রাণীর সেখানে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে।

সচেতনতার অভাব এবং প্রাণীভীতিঃ

জীব বৈচিত্র্যের ব্যাপারে নিজ বাড়ির সদস্যদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সচেতনতা না থাকাও জীব বৈচিত্র্যের আজ এই দূর্দশাগ্রস্ত হওয়ার কারণ। আমিও এ ব্যাপারে সচেতন ছিলাম না। যে কারণে, কোন বন্য জীব দেখলেই তা ধাওয়া করা বা বন্য জীবের আগমন যেন না ঘটে সে ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া। এখানে একটা জিনিস তাহল, বন্য প্রাণীর আগমন বন্ধ না করে বরং তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা দুটো দুই জিনিস। বন্য প্রাণী কিছু ক্ষতি করতেই পারে যেহেতু তাদের হ্যাবিট্যাট আমাদের দ্বারা ধ্বংস হয়েছে। তাদের এই ক্ষতি করা যে তাদের ইচ্ছাকৃত ব্যাপারটা এরকমও নয়। যে আমরা তাদের পরিবেশ নষ্ট করেছি এখন তারা এসেছে আমাদের প্রতিশোধ নিতে। না, ব্যাপারটা মোটেও এরকম নয়। তারা আসে শুধুমাত্র খাবারের সন্ধানে।সেই খাবার আমাদের নিকট আছে কিনা সেই খোঁজটুকুই তারা নিতে আসে। আমাদের যা করা উচিত ছিল তা হল তাদেরকে ভয় না দেখিয়ে তাদের চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা। গুই সাপের দ্বারা মানুষের আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড নেই। তাই তাকে ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। গুই সাপ মাছ খায় তাই তাদেরকে তাড়াতে হবে এ চিন্তাটাও ভুল। গুই সাপ শুধু মাছই খায় না এরা সব কিছুই খায়। পাখির ডিম হতে শুরু করে ব্যাঙ ,কাঁকড়া , মাংস সব। তাই আমি যদি আমার জীব বৈচিত্র্যকে ভরপুর করতে পারি তাহলে সে আমার চাষের মাছের ব্যাপারে কমই আগ্রহ দেখাবে।এটা মনে রাখা দরকার সব প্রাণী খাবারের ব্যাপারে সহজ জিনিসগুলোই বেছে নেয়। একটা মাছ শিকার করতে তাকে যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে হবে একটা পাখির ডিম শিকার করতে সে পরিমাণ করা লাগবে না। এছাড়াও ঢোঁড়া নির্বিষ হলেও , মেটে সাপ একেবারেই মাইল্ডলি ভেনোমাস সাপ এদের দ্বারা মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সম্ভব নয়। কিন্ত দেখা যায় সাপ ভীতির কারণে এই প্রাণীদেরকেও কালেভদ্রে মারা হয়েছে। এছাড়াও পুকুরে মাছ ধরার সময় জেলেরা কচ্ছপ ধরলে তা বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিদের নিকট দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাও করা উচিত হয় নাই।  এটা ভাবতেই আমার নিকট অবাক লাগে। যদি ছোট থেকেই সচেতনতা আমরা পরিবার থেকে গ্রো আপ করতে পারতাম তাহলে হয়তবা আজ দৃশ্য কিছুটা ভিন্ন হত। এছাড়াও গাছ গাছালি রোপনের ব্যাপারে কোন ক্রাইটেরিয়া না মেনে যখন যার ইচ্ছা সে গাছ লাগানোও আমাদের জীব বৈচিত্র্যকে হুমকির সম্মখীন করে দিয়েছে।

আশার কথাঃ

তবে এখন আমাদের বাসার সদস্যরা জীব বৈচিত্র্যের ব্যাপারে অনেক সচেতন । এবং বাসাতে পাখির আগমন কমে যাচ্ছে এ ব্যাপারটা সবাইকেই ভাবিয়ে তুলছে। যে কারণে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ফলজ উদ্ভিদ রোপন করা হচ্ছে। কিন্ত অন্যান্য বড় গাছ এবং মাটির পুষ্টিগুণ কমে যাওয়াতে এ উদ্ভিদের বেড়ে উঠার পরিমাণ খুবই অল্প। তারপরেও টিকে যাওয়া ফলজ উদ্ভিদ্গুলোর ব্যাপারে যত্ন নেওয়া হচ্ছে। ময়লা ফেলার জন্য আলাদাভাবে স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। প্লাস্টিক এবং পচনশীল দ্রব্যের জন্য আলাদা জায়গা করা হয়েছে। পুকুরে দেশি মাছ ছাড়ার ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কিন্ত কিছু হতাশার ব্যাপার হল, দেশি মাছ সাধারণত ছোট পুঁটি গুড়ো মাছ এগুলো পুকুরে ছাড়ার উপায় নেয়। কেননা এগুলোর চাষ কোথাও হয় না। এগুলো বিভিন্ন খাল বিল থেকে বন্যার মাধ্যমে পুকুরে আসে। আর এ মাছই সাধারণত জলাভূমিকে কেন্দ্র করে যে পাখিগুলো বেড়ে উঠে তাদের মূল খাদ্য। যেমনঃ বক জাতীয় পাখি তারপর মাছরাঙ্গা। আবার পাখি যে ফল পছন্দ করে সে সমস্ত দেশি গাছের চাড়াও কোথাও বিক্রি করা হয় না। যেমনঃ খইয়া বাবলা (জিলাপি ফল গাছ) , দেশি গাব গাছ, ডুমুর গাছ ইত্যাদি উদ্ভিদের চারা কোথাও বিক্রি হয় না। কিন্ত পাখির হটস্পট বানাতে চাইলে এ গাছগুলোর খুব প্রয়োজন। তবে আশার কথা হল, ছোট আম গাছগুলো এখন ফল দেওয়া শুরু করেছে। যে কারণে এই আম গাছ কে কেন্দ্র করেই পোকারা আবার বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। রিসেন্টলি মৌমাছি প্রতি বছর আমাদের বাসায় বাসা বাঁধছে। আর এই পোকাদের খেতে পাখিদের আনাগোনাও কিছু পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও কিছু প্রাণীর টিকে থাকার যোগ্যতা এতটাই বেশি যে পরিস্থিতি যাই হোক তারা তাদের রুট বা শিকড় ত্যাগ করবে না এ ব্যাপারে তারা পুরোপুরি ডিটারমাইন্ড। এগুলো হল, পাখিদের মধ্যে ডাহুক, স্তন্যপায়ীদের মধ্যে বেজি আর সরীসৃপের মধ্যে গুই সাপ। এদের সংখ্য কমে গিয়েছে এটা সত্য । কিন্ত তারপরেও তারা বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করে টিকে যাচ্ছে। এছাড়াও কুনো ব্যাঙ এর সংখ্যাটাও বাড়ছে মনে হল। অর্থাৎ পোকার সংখ্যা যে বাড়ছে এটা তার এক প্রমাণ। যা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে তা হয়েছে। এখন যা আছে তাকে সম্বল করেই এগোতে হবে। এতদিনে যে ক্ষতি হয়েছে তা যেন আর না হয় সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। তাহলে সম্ভাবনা আছে আবারও পরিপূর্ণ এক জীব বৈচিত্র্য ফিরে পাব। যার মাঝে বড় হবে আমাদের সন্তানেরা।

নোটঃ এই লেখাটি গত ১৮ই মার্চ, ২০২০ এ লেখা হয়। ফেইসবুক পেইজে ওদিনই পোস্ট করা হয়। কিন্ত করোনাকালীন লকডাউনে আমাদের বাসার জীব বৈচিত্র্য নিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা হয়। যা ইনশাআল্লাহ অতি শীঘ্র আপনাদের সাথে শেয়ার করা হবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.