ছেলেবেলার জীব বৈচিত্র্য বনাম এবেলার জীব বৈচিত্র্য – ১ম পর্ব
১ম পর্ব
…
আমার বড় হয়ে উঠা ছোট এক মফস্বলে । মফস্বল অনুযায়ী আমাদের বাড়ির এরিয়াকে মোটামুটি বড়সড়ই বলা যায়। ঢুকতেই এক মাঠ। তারপর এক পুকুর। পিছনে আরো কিছু জায়গা এবং মধ্যখানে এক ঘর। এই ছিল ছোটবেলাতে আমাদের বাড়িঘরের অবস্থান। এরিয়ার বাহিরে পশ্চিম দিকে এক বড় খালি নিচু মাঠ। উত্তর দিকে এক সরু খাল। পূর্ব দিকে যাদের বাড়ি তাদের ওয়াল কিন্ত ওয়ালের ঐ সাইডেও বড় কোন স্থাপনা নেই। আছে শুধুমাত্র কিছু জঙ্গল। অর্থাৎ জীব বৈচিত্র্যতার সাথে বড় হওয়াটা আমার জন্য ছিল স্বাভাবিক এক ব্যাপার। জীব বৈচিত্র্যতার সাথে বড় হয়েছি ঠিকই কিন্ত অনুভব করতে পারেনি যে কিসের স্পর্শে বড় হচ্ছি।
…
আমার মনে আছে বাসার সামনে মাঠে দুবলো ঘাসে অনেক ছোট ছোট গুল্ম টাইপের গাছ হয়ে থাকত তাতে আবার ফুল আসত। সেই ফুলের মধু খেতে নানা রঙ্গ বেরঙ্গের প্রজাপতি আসত। আমরা প্রজাপতিদের উপর ঝাপিয়ে পড়তাম। এক অদ্ভুত সৌন্দর্য উপভোগ করতাম। ঘাসের মাঝে খুঁজে পেতাম বিভিন্ন ঘাস ফড়িং। ঘাস ফরিঙ্গের মারদাঙ্গা লাফিয়ে বেড়ানো করত আমাদের আশ্চর্য। জীব বৈচিত্র্যের মাঝে বড় হওয়া মানে যদি কেউ ধরে নেয় ক্যালিফোর্নিয়ার মত ভাল্লুক আর ভারতের মত লেওপার্ডের পাশে থেকে বড় হয়েছি তাহলে সে ধারণাটা ভুল। সব ভূমিরই নির্দিষ্ট জীব বৈচিত্র্য থাকে । নিউ জিল্যান্ডে কোন অ্যাপেক্স প্রিডেটর নেই। আবার এক আফ্রিকার সেরেনগাটিতেই ছয়ের কাছাকাছি অ্যাপেক্স প্রিডেটর আছে। নিউজিল্যান্ডে অ্যাপেক্স প্রিডেটর না থাকলেও তার জীব বৈচিত্রের কোন কমতি যেমন নেই ঠিক সেরকম সেরেনগাটিতেও তাই। এটাই অঞ্চলভেদে জীব বৈচিত্র্যের এক সৌন্দর্য।
কয়েকদিন আগে বাড়িতে যাই। আমি এবার আবার আমার বাড়ির জীব বৈচিত্র্য খুব কাছ থেকে খেয়াল করি। এবং একে আমার অতিতের সাথে তুলনা করি। এবং কিছু বিষয় আমার নিকট স্পষ্ট হয়। এখানে আমি তাই লিখে চলছি।
জীব বৈচিত্র্যের টিকে থাকা নির্ভর করে তার পরিবেশের উপর। পরিবেশে যদি টক্সিসিটি তারপর খাদ্যের অভাব দেখা দেয় তখন নিঃসন্দেহে তার প্রভাব জীব বৈচিত্র্যতার উপর পড়বে। আগে বাড়িতে সুন্দর সুন্দর পাখির দৃশ্যয়ন এবং ডাক শুনে সময় কাটত। কাঠ ঠোকড়ার আওয়াজ ঠক ঠক করে সুপারি গাছ ফুটো করার আওয়াজ প্রতিদিনই পেতাম। বাড়িতে ছিল টিয়া পাখির বাসা। মাছরাঙ্গা কে নিজে পুকুরের পারে বাসা করতে দেখছি। অসংখ্য ছোটপাখি যেগুলোকে একটা থেকে আরেকটা আলাদা না করতে পেরে সবাই কে কমনলি টুনটুনি ডাকতাম। বাবুই পাখির ঝাক থাকত বাসার মাঝে। তাল গাছে বাসা বাঁধত বুলবুলি পাখি। মাঝেমধ্যে দেখতাম বসে আছে তেতুল গাছের মাথায় একটি পেঁচা। দোয়েল পাখি কে দেখতাম পোকামাকড় খেতে। দেখেছি শালিকের ঝাঁক। আর ডাহুক কে তো দেখেছিই তার বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতে।
……
কিন্ত আশ্চর্য হলেও সত্যি তার কিছুই এখন আর বাকি নেই। যা আছে তা খুব সামান্য। এটা কেন হয়েছে তা আমি নিচে বিস্তারিত বলব।
.
সরীসৃপ নিয়ে এবার কথা বলি। পুকুরে কচ্ছপ (Spotted pond turtle) থাকত সবসময় এটা ২০১৬ সালেও দেখেছি। আট দশের কম থাকত না। এই কচ্ছপ বাংলাদেশে এখন এন্ডেঞ্জারড। ভেবে আশ্চর্য হলাম। এবার বাড়ির পুকুরেও এই কচ্ছপের দেখা পেলাম না। কিন্ত এক সময় আমার নিজে্র মনে আছে ছোট বেলায় বাড়ির সিড়ির ধারে আসতে দেখেছি হয়তবা ডিম পাড়ার জন্য আসত। লিজার্ডের মাঝে দেখা পেতাম কমন গার্ডেন লিজার্ড বা কাকলাশ আর কিল্ড গ্রাস স্কিঙক বা আঞ্জনির। এছাড়াও মোটামুটি তিন ধরণের টিকটিকির কথা আমার মনে আছে। Common House gecko, Brook’s House gecko, Yellow bellied House gecko. গুই সাপ ছিল দু টাইপের ওয়াটার মনিটর আর ইয়েলো মনিটর। বাংলাদেশে আছেই তিন প্রকারের গুই সাপ । সেখান থেকে দুই প্রকার থাকা মানে কম কিছু না কিন্ত। এটাই ছিল আমাদের বাসার অ্যাপেক্স প্রিডেটর। সাপের মধ্যে দু প্রকার সাপের সন্ধানই সবসময় পেয়েছি। ঢোড়া সাপ আর মেটে সাপ। এই সরিসৃপদের আবাস ছিল আমাদের পুকুর এবং পিছনের খালকেই কেন্দ্র করে।
.
জলজ প্রাণীর মধ্যে ওয়াইল্ড এনিম্যাল হিসেবে যেগুলো সবসময় আমাদের পুকুরে পেয়েছি তা হল , এক প্রকারের কাঁকড়া, কই মাছ, কুঁচে।
…
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ছিল বেজি, ইঁদুর , চিকা ।
.
উভচর প্রাণীদের মধ্যে সন্ধান ছিল শুধুমাত্র কুনোব্যাঙ এবং কোলাব্যাঙ্গ। এই দু জাতই সবসময় দেখতাম। কিন্ত ২০১২ সালের দিকে এক নারিকেল গাছের পাতায় এক সবুজাভ ব্যাঙ্গের দেখা পাই। ওই একবারই দেখি।
…
এছারাও ভিজিটর এনিম্যালের মধ্যে যাদের দেখা মাঝেমধ্যে পাওয়া যেতঃ বানর, একটা দুটো দল ছাড়া লেঙ্গুরের দেখা প্রায়ই পাওয়া যেত। এছাড়াও দুবার কাঠবিড়ালির ( Northern Palm Squirrel) এর দেখা পাই। আর ক্যাট জাতীয় প্রাণির মধ্যে বাসার এরিয়া মধ্যে ওয়ালের উপরে বন বিড়াল (Jungle cat) এর দেখা পাই। এবং ফিসিং ক্যাটের ডাক শুনতে পেতাম। বন বিড়ালের ডাক এখনও মাঝেমধ্যে শোনা যায়।
…
চলবে………………
[…] […]
[…] […]