আফ্রিকার দৈত্যাকার শামুকের সাথে সাক্ষাৎ

আফ্রিকার দৈত্যাকার শামুকের সাথে সাক্ষাৎ

Spread the love

লক ডাউনের একদিন পূর্বেই বাড়িতে চলে আসি। বাড়ির বাগান বলতে মা চাচিদের লাগানো কিছু সবজি বাগানই বাকি আছে। বাদবাকি সবই ঝোপঝাড়। এই ঝোপঝাড়ের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ করে এক দৈত্যাকার শামুকের সাথে দেখা। এই শামুককে আমি পূর্বেও দেখেছি। কিন্ত এমন স্থানে দেখেছি যেখান থেকে তাকে স্টাডি করব সেই সুযোগ ছিল না। আমার মনে আছে এক রাতে আমাদেরই এক লোকালয়ের রাস্তার দেয়ালে বসে তাকে রাস্তার ধারের ঘাসগুলোকে দেদারসে খেতে দেখেছি। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম একে দেখলে মনে হয় কত দূর্বল। কিন্ত রাতের আধার নেমে আসলে এরাই কত শক্তিশালী হয়ে উঠে। প্রথম দিনে আমি দুটো এই দৈত্যাকার শামুক খুঁজে পাই। পরে এদের নিরীহ এবং সুন্দর চেহারা দেখে ছেড়ে দেই। এবার শামুকের ব্যাপারে আপনার চোখ বড় হয়ে যাবার মত কিছু তথ্য দিচ্ছি।

নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে এটা  আমাদের দেশের কোন শামুক নয়। এর ইংরেজি পুরো নাম Giant African snail বাংলাতে এর অর্থ করলে দাঁড়ায় দৈত্যাকার আফ্রিকান শামুক। এখন প্রশ্ন হল , আফ্রিকার শামুক বাংলাদেশে এল কোথা হতে ?

.

আশ্চর্য সত্য হল এই প্রশ্নের উত্তর শুধুমাত্র আমরাই যে খুঁজছি ব্যাপারটা এরকম নয় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে ফ্লোরিডা, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, ইন্ডিয়া এর গবেষকেরা অনেকদিন ধরেই। সহজ হিসেব এটা হয়তবা আফ্রিকা থেকে আসা কোন কনটেইনারের মাধ্যমে চলে আসতে পারে। এই শামুক পৃথিবীর অন্যতম ভয়াবহ ইনভেডারস বা আক্রমণকারী জীব হিসেবে সাব্যস্ত। ২০১৬ সালের দিকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈত্যাকার এই শামুকের দেখা মিললে তখন প্রথম এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনাতে আসে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার এক রিপোর্টে অ্যাকুয়াকালচার ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ডক্টর এম এ সালাম স্যার বলেন , “ আফ্রিকার এই দৈত্যাকার শামুক দুঃস্বপ্নের মত। এটা বিশ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে আর এর ডায়া হতে পারে বার সেন্টিমিটার পর্যন্ত। প্রতি বছর কম করে হলেও বারোশ এর উপর ডিম পারতে পারে। এগুলোর তীব্র তাপমাত্রাতেও টিকে থাকার ক্ষমতা রয়েছে। একে শিকার করে খাবে এরকম কোন প্রাণী নেই। আর এর মূল খাবার হল ফসলের শস্য। এছাড়াও তারা মেনিনজাইটিসের জীবানু বহন করে যা মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট হয়ে যেতে পারে।

প্যারাসাইটোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রোফেসর ডক্টর আবদুল  আলিম স্যার বলেন, ‘ এটা আমাদের স্থানীয় শামুকদের জন্যও হুমকিস্বরূপ। এবং এর কারণে ইকোসিস্টেম ভেঙ্গে পড়তে পারে। এই পেটুক শামুক বিভিন্ন রকমের শাক সবজি খেয়ে সাবাড় করতে পারে। আর এটা কৃষি সবজির জন্য অন্যতম পেস্ট  (কীট) হিসেবে বিবেচ্য । এছাড়াও এরা সেগুন কাঠ , রাবার , চা এগুলোর উপরও আক্রমণ করে। এটা হর্টিকালচার এবং মেডিসিন প্লান্টের জন্যও বিশাল ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।“

.

এই শামুকের কাচা অংশ বিশেষ করে যা মাংসল অংশ তাই মূলত প্যারাসাইট বহন করে। এটা যদি কেউ অপূর্ণ বা আধা কাচা অবস্থায় ভক্ষণ করে তাহলে সম্ভবনা আছে যে সে জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও এই শামুক উদ্ভিদের ব্লাক পড রোগ ছড়ানোর জন্যও দায়ী। [১]

এই শামুকের সাথে বিশ্বের জীব বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এলাকাগুলোতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হল ভারতের কোদাগু এবং কেরালা। গত তিন দশক ধরে তারা এই শামুকের সাথে রীতিমত যুদ্ধ করে আসছে। খুব রিসেন্টলি তারা তাদের যুদ্ধের সফলতার মুখ দেখতে পেরছে তারা কিছু ইফেক্টিভ ওয়ে খুঁজে বের করেছে। এই শামুকের জন্য তাদের চা , কফি শস্য নিয়মিত হারে নষ্ট হত। তারা এই শামুকের ব্যাপারে যে নীতি ফলো করে তাহল ‘ ধর এবং মার’ পলিসি [২]। এছাড়া গত বছর কিউবাতেও এই শামুক পত্রিকার শিরোনাম হয়। সেখানেও এই সামুককে প্লেগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এবং এর সাথে যুদ্ধ করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিউবাতে এই শামুক প্রথম নজরে আসে  ২০১৪ সালের দিকে। কিন্ত তখন একে গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য আজ এই পরিস্থিতির মুখোমুখি [৩]। এছাড়া ফ্লোরিডাতেও এই শামুক ইতোমধ্যে হুমকি হিসবে সাব্যস্ত হয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার কৃষকরাও এই শামুক নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। এ জন্য সেখানে ইতোমধ্যে এই শামুকের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটা কৃষি শস্যের জন্য সত্যিকার অর্থেই এক মারাত্মক হুমকি। পাঁচশত রকমের  খাদ্য শস্য এরা খেয়ে সাবাড় করতে পারে। যার মধ্যে আছে , লেটুস, কপি, লেবু, কলা, সিম ইত্যাদি শস্যের উদ্ভিদ। শস্যের কান্ড, পাতা , ফুল , ফল ,বীজ  এমনকি পুরো গাছই খেয়ে সাবাড় করে দিতে পারে। আরেকটা বিপদজনক বার্তা হল এটা খালি হাতে স্পর্শ করাও বিপদের কারণ হতে পারে। কেননা এর মাংসল অংশ অতি সহজেই মানুষের শরীরে ব্যাক্টেরিয়া এবং বিভিন্ন জীবানু হস্তান্তর করতে পারে [৪] ।

..

এখন প্রশ্ন হল , আমি আমার পাওয়া শামুক গুলো দিয়ে কি করি , আমি টোটাল শামুক পাই চারটা। দুটো প্রথমে পেয়ে ছেড়ে দেই। পরে এ দুটোর মধ্যে একটিকে মৃত অবস্থায় বাসার এরিয়ার মধ্যেই এক মাস পড়ে পাই। মাংসবিহীন শুকনো অবস্থায়।  সেটাকে ভালোভাবে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ঘরে এনে সাজিয়ে রাখি। আরো দুটো মাঝারি সাইজের পাই। এর মধ্যে একটাকে মেরে ফেলি ইনভেসিভ , বিপদজনক  শস্যের কীট হিসেবে চিন্তা করে। আর আরেকটাকে দিয়ে কিছু ফটোগ্রাফি করি যাতে করে তা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারি। 

.

তথ্যের উৎসঃ

[১] ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিডি পত্রিকার লিঙ্কঃ http://m.theindependentbd.com//arcprint/details/28718/2016-01-01

[২] https://scroll.in/article/932505/both-kodagu-and-kerala-are-fighting-off-an-invasion-of-giant-snails-but-only-one-has-found-success

[৩] https://www.bostonglobe.com/news/world/2019/09/30/cuba-battling-plague-giant-snails/HUJrEvjPxUPTYPhVeC9dVI/story.html

২ thoughts on “আফ্রিকার দৈত্যাকার শামুকের সাথে সাক্ষাৎ

  1. কাওছার

    এই শামুকগুলো আমাদের দেশের কোন প্রান্তে বেশি দেখা যায়?

    1. সাওয়াবুল্লাহ্ হক

      ধন্যবাদ আপনার প্রশ্নের জন্য,

      এই শামুক সম্পর্কিত Bangla News 24 এর একটা রিপোর্টে বাকৃবির প্রফেসর আব্দুস সালাম স্যার বলেন, “২০০২ সালে শ্রীমঙ্গলের ডানকেন চা বাগানে এ প্রজাতিটি বাংলাদেশে প্রথম দেখতে পাওয়া যায়। ফসল ও বাগানের ক্ষতি করে বলে সে সময় এদের ধরে ধরে মেরে ফেলা হতো। এরপর এদের তেমন আর দেখা যায়নি। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ প্রজাতির শামুকটির  উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ”
      .
      আমি ব্যক্তিগতভাবে এদেরকে বাগেরহাটে এবং আমার নিজ জেলা মাদারীপুরে দেখেছি। আপনার শহরে এর দেখা পেলে জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.